জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে ভ্যাট বকেয়া প্রায় ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা (সুদ ছাড়া)। এই টাকা পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে তিন কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ করছে পেট্রোবাংলা। এরই মধ্যে প্রথম কিস্তির পাঁচ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয় কিস্তির পাঁচ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে পেট্রোবাংলাকে তাগাদাপত্র দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (মূসক)। সম্প্রতি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানকে এলটিইউ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলার কাছে উত্তোলিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে বকেয়া ভ্যাট বাবদ ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা পাওয়া রয়েছে। দীর্ঘদিনেও পরিশোধ না হওয়ায় জটিলতা নিরসনে বকেয়া পরিশোধে এনবিআর ও পেট্রোবাংলার মধ্যে বেশ কয়েকবার সভা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তোলিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রাজস্বের ওই টাকা সুদ ছাড়া তিন অর্থবছরে পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগকে বিনা সুদে পেট্রোবাংলাকে ঋণ প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়। যেমন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তিন হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলাকে দেবে। এরই মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলার পাঁচ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ হাজার কোটি টাকা জমা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ভ্যাটেই বকেয়া ছিল ২২ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। ভ্যাটের বাইরে আয়কর ও আমদানি শুল্ক বাবদ পাওনা রয়েছে আরও ১৪ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এলএনজি আমদানির শুল্ক হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস পেট্রোবাংলার কাছে পাবে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। অর্থ সংকটে শুধু এনবিআরের বকেয়া নয়, আমদানি করা জ্বালানি বিশেষ করে এলএনজি আমদানির দায়ও মেটাতে পারছে না পেট্রোবাংলা।
এনবিআর সূত্রমতে, পেট্রোবাংলার কাছে পাওনা টাকা আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে এনবিআর। এর আগে আয়োজিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনবিআরের বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করতে পেট্রোবাংলাকে ঋণ দিতে অর্থসচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-ভ্যাটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সংস্থাটির বকেয়ার পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।
বকেয়া পরিশোধে এনবিআর ও পেট্রোবাংলার মধ্যে বেশ কয়েকবার সভা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির উত্তোলন করা গ্যাস বিতরণের বকেয়া ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ভ্যাটও দীর্ঘদিন পরিশোধ না হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এই জটিলতা কাটাতে চলতি বছরের জুনে অর্থ বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভায় এনবিআরকে টাকা পরিশোধের শর্তে বিনা সুদে পেট্রোবাংলাকে তিন অর্থবছরে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তিন হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ঋণ অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলাকে দেবে। এরই মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলাকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ অনুমোদন করে। চলতি অর্থবছরে পূর্বনির্ধারিত পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করেছে এনবিআর।
পেট্রোবাংলা ছাড়াও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং এর বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের বকেয়া আরও ১৭ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাবদ বিপিসির বকেয়া ছয় হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের বকেয়া দুই হাজার ২৮৪ কোটি টাকা, পদ্মা অয়েল কোম্পানির কাছে বকেয়া দুই হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের বকেয়া এক হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বকেয়া এক হাজার ২৮ কোটি টাকা।