একক গ্রাহকের ঋণসীমা ৩৫% করার দাবি ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে একটি ব্যাংক ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে একজন গ্রাহককে মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে একক গ্রাহকের ঋণসীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। গতকাল রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে এসব দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছেন, ব্যবসা ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো জানাতে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি ও ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা গভর্নরের কাছে মোট নয় ধরনের সুবিধা চেয়েছেন। এদিন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, একসঙ্গে ঋণের সুদহার বাড়ানো, গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং বেতন বাড়ানোÑএভাবে ব্যবসা চালানো কঠিন। কোনো দেশে এমনটা নেই। এজন্য আমরা চাই বড় শিল্পের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরের ঋণ সুবিধা। এছাড়া ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হোক। ছোট শিল্পের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরের ঋণ সুবিধা চাই, যেখানে এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিলের সুবিধা থাকবে। এজন্য পৃথক সার্কুলার দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মর্টগেজ সম্পদ বিক্রির জন্য অনুমোদন নিতে হবে। ব্যাংকের একক গ্রাহকের ঋণসীমা আগের অবস্থানে নেয়ার দাবি জানাই। একটি ব্যাংক বর্তমানে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে একজন গ্রাহককে মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর আগে এ সীমা ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও, তা পরিবর্তন করা হয়েছিল। এক ঋণসীমা বৃদ্ধি করা হলে এলসির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, নগদ প্রণোদনার জন্য যে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা দিতে ন্যূনতম ৯ থেকে ১২ মাস সময় লাগে; এরপর বিতরণ করতে ৮ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। এ সময় নামিয়ে আনতে হবে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে। ব্যাংক সুদের হার ৯ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশে উঠানো হয়েছে। এই সংকট সমাধান করা অসম্ভব। এ সমস্যা নিরসনের জন্য জোর দাবি জানাই। উৎপাদনমুখী শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য সুদহার কমানোর দাবি জানিয়েছি। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের কথা জানিয়েছি, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য একটি প্রক্রিয়া খুঁজে বের করার জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, বড় ও মাঝারি শিল্প খাতের রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক খাতের দায়-দেনা মুক্তির জন্য এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। হেরে যাওয়া থেকে অন্তত মানসম্মান নিয়ে ব্যবসা করে যেতে চাই। এ নিয়ে আমাদের জোর দাবি ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকও এটা নিয়ে কাজ করছে।
একটি প্রতিষ্ঠান এক্সিট সুবিধা নিয়ে পরবর্তীতে কীভাবে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবেÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার-উল আলম বলেন, একজন ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকে। সব প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে খারাপ হয়ে যায় না। যে প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হয়েছে তার দায় পরিশোধের জন্য তার অন্য ভালো প্রতিষ্ঠানের আয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের শর্ত অনুযায়ী, ঋণ শ্রেণিকরণে নতুন নিয়ম চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নিয়ম অনুসারে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে, তিন মাস মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর সব ধরনের ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হবে। বর্তমানে এ সময়সীমা ছয় মাস।

ঋণখেলাপির নতুন এই নিয়মের বিষয়ে বিসিআই সভাপতি বলেন, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার যে শর্ত ঠিক করা হয়েছে, তা শিথিল করার দাবি জানাই। গ্রাহক ছয় মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি হবে, এটাকে অন্তত ৯ মাসে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছি। দেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নতি না হলে শিল্প টিকে থাকতে পারবে না। শিল্পে এলসি খোলায় এখনও জটিলতা রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক সংস্কার কমিটিতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের থাকা দরকার বলে আমরা মনে করছি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এদিন আরও উপস্থিত ছিলেনÑবিজিএমইএ’র প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বিসিআই’র পরিচালক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এলএফএমইবির সিনিয়র সহসভাপতি নজরুল হাসান সোইল, বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক, বিসিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল ইসলাম স্বপন, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাপ আহমেদ, বিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী।