বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি, ততটা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম।’ শনিবার রাজধানীতে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। তার মতো একজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদের আমাদের নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের স্বস্তি দেবে বলেই ধারণা। প্রতিকূল পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা সাসহ পাবেন। আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য-ঘাটতির হিসাব করেছে। অথচ বর্তমান পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি, সেটি তারা বিবেচনায় নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র শুধু আমাদের জন্য নয়, অনেক দেশের জন্যই ‘সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া দেশ’, কোনো দেশই একক দেশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করে না। তাই আমাদেরও একক দেশের ওপর অতি মাত্রায় রপ্তানিনির্ভরতা কমাতে হবে। বিশেষ করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় পণ্যের বাজার বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে আমাদের।
শুধু পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল না থেকে অন্যান্য শিল্পের উন্নতিতেও মনোযোগ বাড়াতে হবে। পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারলে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও দ্রুত ভোক্তাদের পছন্দের পরিবর্তনে উদ্ভূত সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যুক্ত কৃষি একটি বড় আয়ের উৎস। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ধকল কমানো গেলে সেখান থেকে অর্থনীতি বড় সহায়ত পাবে। গ্রামাঞ্চলে জীবনযাপনের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারণ মানুষেকে গ্রামে রাখার জন্য কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে। প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও বড় অবদান রাখে। যেহেতু প্রবাসী আয় লাখ লাখ পরিবারের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; প্রবাসী আয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশকে ভবিষ্যতে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
দেশের এসব প্রধান খাত, অর্থাৎ পোশাকশিল্প, কৃষি ও প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য খাতের উন্নতিতেও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। যেমন প্রযুক্তি, উৎপাদন ও সেবা খাতের মতো খাতে বৈচিত্র্যকরণ প্রধান খাতের বাইরেও প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে এবং প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নতি ঈর্ষণীয়। এখানে কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান প্রভৃতি স্থানে পর্যটনের বেশ ভালো ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সঠিকভাবে প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
দুর্নীতি, প্রশাসনিক জটিলতা ও অস্থিতিশীল নীতিমালা ব্যবসার অনুকূল পরিবেশের অন্তরায়। টেকসই ও স্থিতিশীল অর্থনীতি একত্রে নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ, প্রযুক্তি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিতে হবে।