একজন সফল কৃষকের কথা

একজন মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করতে পারে। এমনই একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত মৌলভিবাজারের রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউপি সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান এম মামুনুর রশিদ। বড়কাপন গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে তিনি।
তিন বছর আগে কৃষকের বাজেট অনুষ্ঠান করতে এখানে এসেছিলেন ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানখ্যাত শায়খ সিরাজ। মহলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায়। ইউপি সদস্য হিসেবে কাছে থেকেই সেই অনুষ্ঠান দেখেছিলেন এম মামুনুর রশিদ। ওই অনুষ্ঠানেই তিনি কৃষির প্রতি উদ্বুদ্ধ হন। আগেও সবজি চাষ করতেন। মনের মতো সবজি পাওয়া যায় না তাতে। একটু জেদ চেপেছিল মনে। সেই জেদ ও শায়খ সিরাজের সংস্পর্শে সফল কৃষক হয়ে ওঠেন তিনি।
তিন বছর আগে অল্প কিছু জমিতে চাষ শুরু করে এখন তিনি তিন বিঘারও বেশি জমিতে সব ধরনের সবজি চাষ করছেন। তার জমির একেকটি কুমড়া ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে টমেটো, ঝিঙা, বরবটি, করোলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। ওই সময় বেড়ার জন্য বাঁশ, বিজ ও কিছু না জানার কারণে তেমন লাভ হয়নি। হাজার পঁচিশের মতো লাভ হয়েছিল। সবজি চাষে দক্ষ না হলেও শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন সবজির বীজ বিক্রেতা ও কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে শুরু করেছিলেন চাষ। তাদের কথামতো কাজ করে তিনি ব্যর্থ হননি। পরের বছর আরও দুই বিঘা জমিতে টমেটো, বেগুন, ঝিঙা, শসা, করলা, মিষ্টিকুমড়া, পুঁইশাক, পাতাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি লাগিয়েছেন। বেড়া ও সবজির জন্য বাশের খুঁটি কিনে লাভবান হন।
মামুনুর রশিদ বলেন, রাজশাহী কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে কুমড়ার বীজ সংগ্রহ করেন। একেকটি কুমড়ার ওজন আট থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত হয়। ভালো জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেছেন। দীর্ঘসময় ফলন পাওয়া যাবে। এখন চার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন সবজি ক্ষেতগুলোয়। বাড়িতে গরুও পালন করছেন। কীটনাশক ও সার কম ব্যবহার করে জৈব সারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে সবজি বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, এ বছর তার খরচ কম। বেড়া ও খুঁটির বাঁশ আগেই কিনেছেন। এ বছর না কিনলেও চলবে। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে সবজি চাষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কমকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, তার ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। তিনি কম সময়ে সবজি চাষে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি, তিনিও একদিন আকলু ভাইয়ের মতো (জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক) জাতীয় পুরস্কার পাবেন। তাকে পরামর্শ দিয়েছি, আগাম জাতের সবজি চাষ করার জন্য। এতে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।