শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ: অসময়ে ভাঙছে যমুনা। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। তাই এ ভাঙন রোধে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে নদীতে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করেছেন। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে আরকান্দি থেকে শুরু করে পাকুরতলা আবাসন পর্যন্ত ৬ স্থানে বাঁশের বাঁধ দেয়া হয়েছে। অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষ ঘরসহ জিনিসপত্র অন্য স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে প্রতিশ্রুতিতে আটকে আছে বাঁধ নির্মাণ।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরে এনায়েতপুরের দক্ষিণে ব্যাপক নদী ভাঙন চলছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানের নদীর পশ্চিমপাড় ঘাটাবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে ছিল উথুলি গ্রাম। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণের জন্য একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলে এ পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।
নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে ব্রাক্ষণগ্রাম, আরকান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুড়তলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া যমুনার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত চৌহালী উপজেলার হাটবয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৪টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, তাঁত কারখানাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল, পানিসম্পদ প্রতি মন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও সচিব কবির বিন আনোয়ার। তারা ভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেছেন। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। তবে অসময়ে যমুনা নদী ভাঙনের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সমাজসেবক কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন, সভা, সেমিনার ও অনশন পালন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বারবার বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুম শেষ হয়ে বর্ষ মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন বাঁধ নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বাঁধ দিয়ে ভাঙন থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি।
জালালপুর গ্রামের হাজী আজমত আলী মুন্সি, মহির উদ্দিন, দানেজ বেপারি বলেন, ‘সরকারের কাছে একটাই চাওয়া যেন শিগগির ভাঙন রোধে এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তিনিও একই কথা বলেন, যমুনা তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হতে বিলম্ব হওয়ায় গ্রামের মানুষদের একত্র করে বাঁশের বাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এনায়েতপুরে ভাঙন রোধে দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গত ডিসেম্বরে এটি পাস হওয়ার কথা ছিল। কভিড-১৯-এর কারণে হয়তো আটকে গেছে। যে কোনো সময় প্রকল্পটি পাস হবে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।’