একবার হলেও কোরআন খতম করা উচিত

 মাওলানা নাসির উদ্দিন: প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানে অধিক পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত করা। অন্ততপক্ষে একবার হলেও কোরআন মাজিদ খতম করা। এ মাসের আরও একটি আমল আছে। আর তা হলো দান-সদকা করা। দান-সদকা সর্বাবস্থাতেই উৎকৃষ্ট আমল, পবিত্র রমজানে তার গুরুত্ব অনেক। হাদিস শরিফে আছে, ‘নবী করিম (সা.) দুনিয়ার সব মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তার দানের হস্ত আরও প্রসারিত হতো।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস-১৯০২

তাই আসুন! আমরা সবাই পবিত্র রমজানের কদর বা মূল্যায়ন করি। তাহলে আল্লাহতায়ালাও আমাদের কামিয়াবী দান করবেন। (আমিন)

মাসালা: সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, (আশুরার রোজা যখন ফরজ ছিল তখন) নবী করিম (সা.) গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে। আর যে খেয়েছে, সেও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ আজ আশুরা দিবস।’ (বোখারি শরিফ, ২০০৭)। অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায়। আব্দুল করিম জাজারী বলেন, কিছু লোক সকালে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। তখন উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) বললেন, যে ব্যক্তি খেয়েছে, সে বাকি দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে।’ (মুহল্লা ৪/২৯৩)।

উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (আবু দাউদ শরিফ ১/৩৩৩)

নিয়তের সময় শুরু হয় আগের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমনÑমঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয়। সুতরাং সোমবার সূর্যাস্তের আগে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। (ফাতওয়ায়ে শামি ২/৩৭৭)। মাসালা: পুরো রমজানের জন্য একত্রে রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়, বরং প্রত্যেক দিনের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত করতে হবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগিরি ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৮)। কারণ প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত) আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। মাসালা: রাতে রোজার নিয়ত করার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া ও স্ত্রী মিলন সবকিছুই জায়েজ। এতে নিয়তে কোনো ক্ষতি হবে না। (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৭)। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজা পালন করার তউফিক দান করুক। (আমিন)

আট রাকাত তারাবি নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়

নবী করিম (সা.) রমজান মাসে তারাবির নামাজ কখনও জামাতে পড়িয়েছেন। আবার কখনও এমন হয়েছে যে, কয়েক রাকাত জামাতের সঙ্গে পড়ে হুজরায় চলে গেছেন এবং একাকি নামাজে রত থেকেছেন। (বুখারি শরিফ, হাদিস-২০১০ ও মুসলিম শরিফ, হাদিস-১১০৪)

নবী করিম (সা.) নিয়মিত জামাত পড়াননি; বরং অধিকাংশ সময় একাকীই পড়তেন। তিনি নিজে কেন জামাতের নিয়ম করেননিÑতা উম্মতকে বলে গেছেন যে, জামাতের সঙ্গে নিয়মিত (তারাবির) নামাজ পরলে এ নামাজটিও উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই তিনি এর জামাত নিয়মিত চালু করেননি। ২০ রাকাতের প্রচলন শুরু হজরত উমর (রা.) থেকে। ১৪ হিজরি রমজানের কোনো এক রাতে হজরত উমর (রা.) মসজিদে তাশরিফ নিয়ে যান এবং সেখানে দেখতে পান যে, মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট জামাত হচ্ছে। তিনি চিন্তা করলেন, সব নামাজিকে এক ইমামের পেছনে একত্রিত করে দেয়া উচিত। তখন তিনি এ আদেশ জারি করেন এবং উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-কে ইমাম বানিয়ে দেন। (বুখারি শরিফ, হাদিস-২০১০)

হজরত উমর (রা.)-এর জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবি চালু করা প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন, উমর (রা.) জানতেন, নবীজী কেন চালু করেননি। তিনি দেখলেন, নবীজীর (ইন্তেকালের) পর এখন আর এ ভয় নেই। কারণ ওহির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। (মুয়াত্তামালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ; আত্তামহিদ, ৮/১০৮-১০৯)

 হজরত উমর (রা.) ২০ রাকাত তারাবির জামাত চালু করে ভুল করেননিÑতা একটি হাদিস শুনলেই বুঝে আসবে। সহি হাদিসে নবী করিম (সা.) আপন সুন্নতের পাশাপাশি খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে অনুসরণ করার আদেশ করেছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘মনে রেখো! আমার পর তোমাদের যারা জীবিত থাকবে, তারা বহু মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নত ও আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নতকে আঁকড়ে রাখবে। একে অবলম্বন করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে প্রাণপণ কামড়ে রাখতে এবং তোমরা (ধর্মীয় বিষয়ের) নবআবিষ্কৃত বিষয়াদি থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে বেঁচে থাকবে। কেননা, প্রতিটি নবআবিষ্কৃত বিষয় বেদাত। আর প্রতিটি বেদাত হলো গেমরাহি।’ (আবুদাউদ, হাদিস-৪৬০৭; তিরমিজি, হাদিস-২৬৭৬; মুসনাদে আহমদ, হাদিস-১৬৬৯২; ইবনে মাজাহ, হাদিস-৪২ ও ইবনে হিব্বান, হাদিস-০৫)