Print Date & Time : 13 August 2025 Wednesday 9:07 pm

একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়

জাতি হিসেবে বাঙালির অন্যতম প্রধান অর্জন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পারা। ভাষার অধিকারকে কেন্দ্র করে ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান রাষ্ট্রে যে বাঙালি জাতীয়তাবোধের উম্মেষ ঘটেছিল, তার ধারাবাহিতকায় এসেছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারার স্বাধীনতা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা কেবল পরাধীন ও আগ্রাসনের শিকার জাতিসত্তা জানে।

মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করেই জাতিসংঘ আমাদের অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে মাতৃভাষার অধিকার এক ধরনের আন্তর্জাতিক পরিগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে যে কোনো মাতৃভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈকি। আমাদের একুশের এ চেতনা ছড়িয়ে পড়–ক বিশ্বময়।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের মতো ভাষা রয়েছে। কিন্তু যেসব ভাষায় বেশিসংখ্যক মানুষ কথা বলেন, সেসব ভাষার প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা। এমনকি যেসব দেশে একাধিক রাষ্ট্রভাষা রয়েছে, সেখানেও প্রধান রাষ্ট্রভাষার প্রভাবে অন্য ভাষাগুলো চাপে রয়েছে। এভাবে প্রতিবছরই কোনো কোনো ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার নিজস্ব বর্ণমালা না থাকায় অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা। বর্তমানে কেবল বাংলাদেশেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১৬ কোটির অধিক। এর বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। এছাড়া বিশ্বায়নের হাত ধরে বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন বাংলা ভাষাভাষীরা। কেবল বাংলা ভাষাভাষীই নয়, জীবিকার প্রয়োজনে বিশ্বের নানা প্রান্তে আবাস গড়ছেন নানা ভাষার মানুষ। কালের আবর্তে একসময় মাতৃভাষার সঙ্গে এসব মানুষের সংযোগ কমে যায়। আবার তাদের পরবর্তী প্রজন্ম মা-বাবার ভাষায় হয়তো কথাই বলে না। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে ইংরেজি ভাষা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় ইংরেজিতেই বেশি রচিত হয়। ফলে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ইংরেজি শেখা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এসব জ্ঞান যদি অন্যান্য ভাষার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে সবাই মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো যেহেতু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে, তাই সংস্থাটি ভাষার স্বকীয়তা রক্ষায় বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞান অন্য ভাষায় রচনা বা অনুবাদের উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করি। একুশের চেতনা লালন করে বিশ্ব সম্প্রদায় সব ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসুক এমনটিই সবার প্রত্যাশা।