এক বছরের ব্যবধানে পাইকারিতে চিনির দাম কমেছে ৩০ টাকা!

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: একদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানি শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে, অন্যদিকে দুবাই, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল ও পাকিস্তান থেকে সরাসরি পরিশোধিত চিনি আমদানি হচ্ছে। এতে বাজারে চিনি সরবরাহ বাড়ায় কমেছে দাম। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১১ টাকায়; যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৪২ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম কমেছে কেজিতে ৩০ টাকারও বেশি।

খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারগুলোয় ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১১১ টাকায় বিক্রি হলেও সরাসরি রিফাইন্ডকৃত আমদানি চিনি ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ গত শনিবার এস আলমের রেডি চিনির ডিও বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৪ হাজার ১৩০ টাকা। একইভাবে সিটি ও মেঘনা গ্রুপের চিনির ডিও বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১৫০ টাকা। এতে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১১২ থেকে ১১১ টাকা ২০ পয়সা; যা এক বছর আগে প্রতিকেজি পাইকারি মূল্য ছিল ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা পর্যন্ত। অথচ খুচরায় একই প্রতিষ্ঠানের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। গতকাল চকবাজার এলাকার খুচরা দোকানগুলোয় প্রতিকেজি ১২৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো দোকানে ১২০ টাকায় বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ লাখ ৯ হাজার অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৭৫০ টন ‘র’ চিনি আমদানি করে। একই সময়ে সিটি গ্রুপের সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৫ টন, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ৩৫ হাজার ৩৩৮ টন, দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড ৯ হাজার ৫০০ টন, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ৬০ হাজার ৫০০ টন এবং প্রাণ ডেইরি লিমিটেড ৪০৫ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। পাশাপাশি একই সময়ে দেড় লাখ টনের কাছাকাছি পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে।

জানা যায়, বৈধ পথে চিনি আমদানি হলেও পার্শ্ববর্তী দেশে চিনির দাম বাংলাদেশের তুলনায় কম থাকার সুযোগে চোরাইপথে চিনি আমদানি বাড়তে থাকে। ফলে চলতি অর্থবছর অপরিশোধিত চিনি তুলনামূলক কম আমদানি হয়। পাশাপাশি অবৈধ পথে চিনি আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত উভয় চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়েছে। এর ফলে অপরিশোধিত চিনির আমদানি খরচ কেজিতে ১১ টাকা ১৮ পয়সা এবং পরিশোধিত চিনি কেজিতে ১৪ টাকা ২৬ পয়সা কমেছে। এছাড়া অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজেরাই দুবাই, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ব্রাজিল থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানি করে বিক্রি করছে।

যার প্রভাবে বাজারের চিনির দাম কমেছে।চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী সুলতান মার্টের স্বত্বাধিকারী শরীফ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, রোজার আগে প্রতিকেজি চিনি কিনেছিলাম ১১৬ টাকায়। আর বিক্রি করছিলাম ১২০-১২১ টাকা। গতকাল কিনেছি ১১১ টাকা করে। এখন বিক্রি করছি ১১৫ টাকা করে। বাজারের চিনি সরবরাহ বেশি, তাই দাম কমেছে।
এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেডিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের আইনবিষয়ক সদস্য ও পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে আমরা ১১১ টাকা করে চিনি বিক্রি করছি।

গত এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা কমেছে। মূলত বাজারের বিভিন্ন পার্টিও চিনি সরবরাহ বেশি। এর মধ্যে এনবিআর চিনি আমদানি শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করায় বাজারে চিনি সরবরাহ বেড়েছে দাম কমেছে। এছাড়া দুবাই, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ব্রাজিল থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানি হচ্ছে বেশি। এ কারণে বাজারের চিনির দাম নিমুখী। এবারের ভোক্তারা চিনিতেও সুফল পাচ্ছে।উল্লেখ্য, প্রতিবছর বাংলাদেশে ২২ থেকে ২৩ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়। যার ৯৮ শতাংশই আমদানির মাধ্যেমে চাহিদা পূরণ করা হয়।