এক বছরে কর্ণফুলী গ্যাসের মুনাফা বেড়েছে ৩৩৮ শতাংশ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: গ্যাস সংকটের মধ্যেও নিট মুনাফা আয়ে চমক দেখিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১২ মাসের ব্যবধানে নিট মুনাফা বেড়েছে ৮৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা ৩৩৮ শতাংশের বেশি। একে অস্বাভাবিক মুনাফা বলে মনে করছেন গ্যাস ব্যবহারকারীরা।

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কেজিডিসিএল বিতরণের জন্য গ্যাস কিনেছে তিন হাজার ৬২ দশমিক ২২ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বিক্রি করেছে তিন হাজার ৯৫ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে সিস্টেম গেইন বা অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রয় ছিল ৩৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সংস্থাটির গ্যাস ক্রয়ের আর্থিকমূল্য ছিল তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ গ্যাস বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করা হয়েছে চার হাজার ৮৮৭ কোটি টাকার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে গ্যাস বিক্রয় থেকে আয় বেড়েছে এক হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। এতে নিট মুনাফা বেড়েছে ৮৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

সংস্থাটির প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে কোম্পানির শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ ছয় লাখ এক হাজার ৭০৩টি। তাদের গ্যাসের চাহিদার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিপরীত বর্তমানে সরবরাহ রয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। মিরসরাইসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্মিত শিল্প-কলকারখানা চালু হলে এ চাহিদা দ্বিগুণ হবে। অথচ কেজিডিসিএল গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি। উল্টো গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কখনও বিতরণে রেশনী বা গ্যাসের প্রেসার কমিয়ে সরবরাহ বজায় রাখা হচ্ছে। ফলে কেজিডিসিএল প্রতি বছর গ্যাস ক্রয়ের চেয়ে বেশি বিক্রয় করছে।

চট্টগ্রামের কেজিডিসিএলের একাধিক গ্রাহক শেয়ার বিজকে বলেন, কভিড-১৯ মহামারির পর থেকে মানুষের আয় কমছে। বিষয়টি বিবেচনা না করে সরকার কয়েক মাস আগে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। তাদের মতে, কেজিডিসিএল মুনাফালোভী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনের সময় অনেক গ্রাহক গ্যাস পান না। এ কারণে কারখানাগুলো গ্যাসের অভাবে শিল্পপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ইস্পাতের টনপ্রতি দাম বাড়িয়েছে চার হাজার টাকা।

ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এম নাজের হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, চলতি বছরে ৩৩৮ শতাংশ মুনাফা বেড়ে যাওয়া দুঃখজনক। কেজিডিসিলের জ্বালানি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত গ্যাস সংগ্রহ ব্যয়ের সঙ্গে অন্যান্য খরচ যুক্ত করে। এর সঙ্গে সহনীয় মুনাফা যুক্ত করে গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করা উচিত। এতে সবার মাঝে একটা স্বস্তি কাজ করবে। কারণ এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দেশের সব জায়গায় এক দামে কীভাবে গ্যাস বিক্রয় হয়? যেখানে পরিবহন খরচ কম কিংবা গ্যাসের প্রাপ্ত্যতা বেশি সেখানে কম দামে গ্যাস বিক্রয় করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো জ্বালানি প্রতিষ্ঠান লোকসান করে না। অথচ তারা কয়েক মাস পর পর জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।

এ বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তিনি অফিসে আসেননি। পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) খায়রুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।