এক বছরে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে সৌরবিদ্যুতের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এজন্য আগামী এক বছরের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন দুই হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিগগির কিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, আমাদের সৌর উৎস থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ পেতেই হবে।

বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হলেও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াটের কম। বৈশ্বিক উষ্ণতা ঠেকাতে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নির্ভরতা বাড়ানোর দাবি উঠছে বিশ্বজুড়ে।

এর আগে নেট মিটারিং পদ্ধতিতে ব্যক্তি উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। প্রায় এক দশক পার হলেও সেই প্রকল্প ভালো ফল না দেয়ায় নতুন এ প্রকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে গতকাল মঙ্গলবার এক কর্মশালায় জানান প্রতিমন্ত্রী।

পাওয়ার সেল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য জমির বহুমুখী ব্যবহার’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রকৌশলীদের নির্লিপ্ততার কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

নসরুল বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করি। আমাদের প্রকৌশলীদের বোমা মারলেও এ ধরনের একটি প্রকল্পের আইডিয়া বের হচ্ছে না। যেগুলো হয়নি, সেগুলো নিয়ে বেশি মাথা খাটাতে চাই না। হয়নি, কিন্তু এবার হবে। টেকনোলজি চেঞ্জ হচ্ছে। এখন আগের চেয়ে কম জায়গা লাগে। সৌর প্যানেলের দাম কমেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াটের সোলার গ্রিডে দিতে পারি কি না, এটাই হচ্ছে আমার কাছে বড় বিষয়।’

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য জমির বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে ভারতের স্টেজ এনার্জি সার্ভিস ও বাংলাদেশের টেকনোবিন এনার্জি সার্ভিস সম্প্রতি একটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষে করেছে। কৃষিভিত্তিক নাবায়ণযোগ্য জ্বালানির বিজনেস মডেল তৈরি করা এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। দেশ-বিদেশে কৃষিভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও অনুষ্ঠানে পর্যালোচনা করা হয়। কৃষিজমিতে উৎপাদন অব্যাহত রেখে কীভাবে কাজগুলো শুরু করা যায়, সেই উদ্ভাবনে হাত দেয়ার ওপর জোর দেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং আমাদের দেশের মূল্যবান কৃষিজমি নষ্ট করা যাবে না। এই দুটি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা এগোচ্ছি। কীভাবে এই কাজটি করা যায়, সেজন্য আমরা কতগুলো ওয়ার্কশপ করছি, কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছি। সারা বাংলাদেশে তারা যাচাই-বাছাই করে বিষয়গুলো খুঁজে বের করবে। কৃষিকে মাথায় রেখে সোলার কীভাবে বাড়ানো যায়, লেক, নদী, জলাশয়ে সোলার স্থাপন করা যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। নদীতে প্রচুর নৌকা চলার বিষয়টি তুলে ধরে সেগুলোকেও কাজে লাগানোর দিকে দৃষ্টি দিতে বলেন নসরুল। এসব চলাচলের মধ্যেও সোলার করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে তারা আমাদের ভালো একটা রিপোর্ট দিয়েছে।’

ভাসমান সোলার বা জমির বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া যেতে পারে বলে মত দেন তিনি। শহরের মধ্যেও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেন নসরুল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রকল্প হাতে নেয়া আবশ্যক। নেট মিটারিং সিস্টেম সেভাবে এগোচ্ছে না। ডেসকো ডিপিডিসি বা নেসকো এলাকায় সোলার রুফটপ কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় এ কর্মশালায় বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমানও বক্তব্য দেন।