এক বিলিয়ন ডলারের ‘সবুজ বিনিয়োগ তহবিল’ অস্ট্রেলিয়ার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: গ্লাসগো কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে কম কার্বন নির্গমনের জন্য বড় ‘বিনিয়োগ তহবিল’ চালু করেছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন গতকাল বুধবার এক বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলারের (৭৩৮ মিলিয়ন ডলার) তহবিল উদ্বোধন করেন, যেখানে দেশটির সরকারি-বেসরকারি খাতে গ্রিন টেক তথা সবুজ প্রযুক্তিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হবে। কার্বন নির্গমন হ্রাসের অংশ হিসেবে এ তহবিল ব্যবহার করা হবে। খবর: এপি, আল জাজিরা।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন আশা করছেন, এক বিলিয়নের এ তহবিলে দেশটির বেসরকারি খাত থেকে সরকারকে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (৩৬৯ মিলিয়ন ডলার) সহায়তা করবে। বাকি ৫০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার দেশটির সরকার বহন করবে। এ বৃহৎ বিনিয়োগ তহবিল থেকে কার্বন হ্রাস করে বিদ্যুৎ খাতে সবুজ বিপ্লবের জন্য ব্যয় করা হবে।

গতকাল এক বিবৃতিতে স্কট মরিসন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া কম কার্বন নির্গমন প্রযুক্তিতে বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে, যা হবে সাশ্রয়ী ও যুগোপযোগী। দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটি কোয়ালিশন বলছে, বৃহৎ এ তহবিল রাষ্ট্রায়ত্ত ক্লিন এনার্জি ফাইন্যান্স করপোরেশেনের মাধ্যমে ব্যয় করতে। এটি সরকারি মালিকানাধীন গ্রিন ব্যাংক, যারা ক্লিন এনার্জি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে থাকে। কিন্তু এর জন্য দেশটির বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করতে হবে।

দেশটির শিল্প, জ্বলানি ও নির্গমন হ্রাস-বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাঙ্গাস টাইলর বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে হলে এখনই চলমান আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু মধ্য-বামপন্থি বিরোধী লেবার পার্টি আইন পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী দেশ অস্ট্রেলিয়া। গ্লাসগো সম্মেলনে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দিতে না পারায় তারা সমালোচিত হচ্ছে। আগামী ১৪ নভেম্বর শেষ হচ্ছে কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলন। এ সম্মেলনকে বলা হচ্ছে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ কার্বন নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশ হয়েও অস্ট্রেলিয়া দৃশ্যত তেমন কোনো অঙ্গীকার করেনি।

গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তির খসড়া প্রকাশ: এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং এ-সংক্রান্ত সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর লড়াইয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান সম্মেলনের সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু-বিষয়ক সংস্থা। গতকাল এ চুক্তির প্রথম খসড়া প্রকাশ করা হয়।

গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি মূলত জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সম্মেলনে অংগ্রহণকারী দেশগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। চলমান কপ২৬ সম্মেলনের শেষে এ চুক্তি ইস্যু করা হবে। আগামী শুক্রবার গ্লাসগোর এ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হবে। তবে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০০ দেশের আলোচকরা এর আগেই এ খসড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত চুক্তিতে রূপ দেবেন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রতিরোধসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এরই মধ্যে একটি লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কাজ করছে দেশগুলো। তাই বিদ্যমান কর্মসূচিতে থাকা গ্যাপগুলো পূরণে আরও কী কী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত এ সম্মেলনে নেয়া হয়, সেটির দিকে কার্যত সারা বিশ্বই তাকিয়ে আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে সূক্ষ্ম আলোচনায় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সধ্যে এখনও বড় বিভাজন দেখা যাচ্ছে। যেসব ইস্যুতে বিভাজন দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে কার্বন মার্কেটের নিয়ম, কার্বন নিঃসরণ বন্ধের সময়সীমা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অর্থ দেয়ার বিষয়টি রয়েছে।

এছাড়া পরিবহন ব্যবস্থা সবুজায়ন করতে বা পরিবেশবান্ধব করতে সম্মেলন থেকে একগুচ্ছ ঘোষণা দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ২৪ শতাংশের জন্য পরিবহন সেক্টর দায়ী।

এদিকে মতপার্থক্য ভুলে বিশ্বের সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, ‘পার্থক্য ও মতভেদগুলো একপাশে রেখে পৃথিবী ও মানুষের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।’