নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। বর্ষা-পূর্ববর্তী জরিপে পাওয়া মশার এ উপস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এবারের বর্ষা মৌসুম-পূর্ববর্তী জরিপে মশার যে উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তা গত বছরের জরিপের চেয়ে বেশি। গতকাল মঙ্গলবার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে জরিপের তথ্য তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সেখানে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান জানান, জরিপে ৯৯টি ওয়ার্ডের তিন হাজার ১৫২টি বাড়িতে যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দল। এ সময় ৪৬৩টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া যায়, যা পরিদর্শন করা মোট বাড়ির ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে ১৪ শতাংশের বেশি উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষার আগে এটা উদ্বেগজনক।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ১৭ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে ২১টি দল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডে জরিপ পরিচালনা করে।
২০২৩ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার চার হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, যা শতকরা ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০২৩ সালের জরিপটি করা হয়েছিল বর্ষা মৌসুমে। সেই সময় মশার উপস্থিতি সাধারণত বেশি থাকে। এবারের জরিপ হয়েছে এপ্রিল মাসে।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ অন্য সময়ের চেয়ে বেশি হতে পারে। এবারের জরিপ করা হয়েছে এপ্রিল মাসে। শুকনো মৌসুমে মশার ঘনত্ব কম থাকে।
‘২০২৩ সালের জরিপ করা হয় জুন মাসে, বর্ষা মৌসুমের জরিপেই এখনকার চেয়ে কম মশা ছিল। সে হিসাবে মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবার মশা বেশি থাকবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিও আগের চেয়ে খারাপ হবে।’
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জরিপে লার্ভা পাওয়া মোট বাড়ির মধ্যে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবন। ২১ দশমিক ৬ শতাংশ স্বতন্ত্র ভবন, ২১ দশমিক ৬ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবন, ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ সেমিপাকা বাড়ি এবং ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ খালি জায়গা।
জরিপ বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আটটি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ২০-এর বেশি। সেই হিসাবে ওইসব ওয়ার্ডে এইডিস মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চামেলীবাগ, রাজারবাগ, বিজয়নগর, পুরানা পল্টন ও শান্তিনগর এলাকা নিয়ে ওই ওয়ার্ড গঠিত। এছাড়া ডিএসসিসির ৪, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শাহ আলীবাগ, টোলারবাগ, পাইকপাড়া ও দক্ষিণ বিশিল এলাকা নিয়ে ওই ওয়ার্ড গঠিত। কোনো এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পাওয়া গেলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।