‘এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান করতে চাই’

কাপড়ের ওপর চুমকি, পাথর, পাইপ, জরি, পুঁতি, গ্লাস প্রভৃতি বসিয়ে পণ্য তৈরি করছেন লালমনিরহাটের মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবু। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘শৈলিকা হ্যান্ডিক্রাফটস’। জেলার দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ঢাকার ইসলামপুরসহ বিভিন্ন শপিংমলে। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা বলেছেন শেয়ার বিজের লালমনিরহাট প্রতিনিধি জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত

শেয়ার বিজ: ব্যবসা শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবু: এইচএসসি পরীক্ষাশেষে ১৯৯৬ সালে কাজের সন্ধানে রাজধানীতে যাই। সেখানে কারুকা নামে একটি পোশাক কারখানায় ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করি। ওই সময় সারা দেশে এ ধরনের পোশাকের চাহিদা ছিল। তবে লোকবল সংকটের কারণে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা যেত না। তখন লালমনিরহাটে এই ব্যবসা চালুর পরিকল্পনা করি। কেননা এখানে কাজের লোকের অভাব নেই। তাই ওই প্রতিষ্ঠানে দুই বছর কাজ করি, অভিজ্ঞতা অর্জন করি। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে ছোট বোনকে রাজধানীতে নিয়ে আসি। তাকে কাজ শেখাই। এরপর লালমনিরহাটে এসে ২০ থেকে ২৫ নারীকে প্রশিক্ষণ দিই, চালু করি শৈলিকা হ্যান্ডিক্রাফটস।

শেয়ার বিজ: চাকরি না করে এ ব্যবসায় এলেন কেন?

জাহাঙ্গীর আলম: ছোটবেলায় কবুতর পুষতাম। আমার একটি নার্সারিও ছিল। তবে সংসারে অভাব থাকায় চাকরি করতে ঢাকায় যাই। চাকরি করে যে বেতন পেতাম তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আসে এ ব্যবসা থেকে। তাই আর চাকরির পেছনে ছুটিনি।

শেয়ার বিজ: উদ্যোক্তা হতে কেমন সমস্যায় পড়েছেন?

জাহাঙ্গীর আলম: আর্থিক সমস্যা তো আছেই। এছাড়া কয়েকজন স্থানীয় কিছু না বুঝেই এ ব্যবসায় চলে আসেন। তারা কারিগরদের লোভনীয় বেতনের আশ্বাস দেন। এ কারণে আমার প্রতিষ্ঠানের অনেক দক্ষ কারিগর ওইসব প্রতিষ্ঠানে চলে যান। তখন বেশ ধকল পোহাতে হয়।

শেয়ার বিজ: আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন কোথায়?

জাহাঙ্গীর আলম: ব্র্যাক ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছি।

শেয়ার বিজ: আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব কী?

জাহাঙ্গীর আলম: নিজেই ডিজাইন করি। একেবারেই স্বতন্ত্র আমার পণ্য। এটাই আমার প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব।

শেয়ার বিজ: বর্তমানে কোনো সমস্যা….

জাহাঙ্গীর আলম: মৌসুমি ব্যবসা এটি। ঈদ উপলক্ষে পণ্য প্রস্তুত করি। প্রায় ৭০ ভাগ পোশাক বিক্রি করি ঈদের সময়। এজন্য প্রায় চার মাস সময় লাগে। অথচ প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যায় না। ফলে প্রডাকশন কম হয়। এছাড়া অনেক সময় গজপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দিতে হয়।

শেয়ার বিজ: সমস্যা সমাধানে কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন?

জাহাঙ্গীর আলম: ঈদুল ফিতরের চার থেকে পাঁচ মাস আগে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। বৃহৎ পরিসরে কাজ করা যাবে। সময়মতো ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা যাবে। সব মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনায় কোনো সমস্যা থাকবে না।

শেয়ার বিজ: নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

জাহাঙ্গীর আলম: দেশে-বিদেশে এ ধরনের পোশাকের চাহিদা আছে। বাংলাদেশে কিছু টেক্সটাইল ও বুটিকের ট্রেনিং সেন্টার আছে। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায় আসা উচিত। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে।

শেয়ার বিজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা স্বপ্ন কী?

জাহাঙ্গীর আলম: উৎপাদন বাড়াতে চাই, স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে চাই। আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৫০ জন কাজ করছেন। আগামীতে যেন এক হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি এটাই আমার স্বপ্ন।