Print Date & Time : 8 September 2025 Monday 9:18 am

এতিমের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ

সাইফুল ইসলাম : আমাদের সমাজে অনেক সময় এতিমের প্রতি অবহেলা ও তুচ্ছতা প্রদর্শন করা হয়। বাবা না থাকায় স্বাভাবিক মানবিক স্নেহবাৎসল্য থেকেও অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয় তারা। ইসলাম, এতিম অসহায় শিশুর অধিকারের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন-হাদিসে জোর তাগিদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, প্রশাসনিকভাবে তাদের অধিকার সংরক্ষণের ভিত্তি রচিত করেছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম…।’ (সুরা: বাকারা-২২০)। সুরা দোহায় বলা হয়েছে, ‘তিনি কি আপনাকে এতিম রূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।’

তিনি আপনাকে শরিয়ত সম্পর্কে যে খবর পেয়েছেন, অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না। সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।’

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর শৈশবে এতিম হয়েছিলেন। জšে§র আগেই পিতা মারা যান আর মাকে হারান মাত্র ছয় বছর বয়সে। কতকাল কতদিন তিনিও ক্ষুধায় কাতর হয়ে পেটে পাথর বেঁধেছেন তার হিসাব নেই।

তিনি নিজেও এতিমদের ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন, কাছে টানতেন। তাই একজন মানুষ হিসাবে প্রকৃত মুসলিম হিসাবে আমাদের সবার উচিত এতিমদের প্রতি সদয়, সহানুভূতিশীল, স্নেহশীল হওয়া।

তিনি তার উম্মতদের প্রতি এতিমের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বার্তা রেখে গেছেন।

হাদিসে বলা আছেÑ

আমি (নবীজী (সা.) এবং একজন এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী, আমরা একসঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করব। (তর্জনী ও মধ্যমা একসঙ্গে তুলে দেখিয়ে বললেন, এই দুই আঙুলের মতো) জান্নাতে একসঙ্গে থাকব।Ñসহল ইবনে সাদ (রা); বোখারী, মুসলিম

মুসলমানদের সে ঘরটি উত্তম, যেখানে এতিমের সঙ্গে ভালো ও সম্মানজনক ব্যবহার করা হয়। আর নিকৃষ্ট ঘর সেটাই, যেখানে এতিমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।- আবু হুরায়রা (রা); ইবনে মাজাহ, মুসলিম, মুফরাদ

অধীনস্থ ও এতিমদের তোমরা তোমাদের সন্তানদের মতো লালনপালন করবে। তোমরা যা খাবে, তাদের তা-ই খেতে দেবে।Ñআবু বকর সিদ্দীক (রা); ইবনে মাজাহ

দুটি বালিকাকে শিশুকাল থেকে যে লালনপালন করে বড় করবে, মহাবিচার দিবসে সে আমার সঙ্গে থাকবে। Ñআনাস ইবনে মালেক (রা); মুসলিম, মুফরাদ

সমাজের দুটি দুর্বল শ্রেণিÑএতিম ও নারীর অধিকার লঙ্ঘন করা, তাদের ধনসম্পত্তি আত্মসাৎ করা কবিরা গুনাহ-জঘন্য পাপ।Ñআবু শোরাইহ খোয়ালিদ (রা); নাসাঈ, রিয়াদুস সালেহীন

কেউ কন্যাসন্তানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় এবং তাদের আন্তরিকভাবে লালনপালন করে, মহাবিচার দিবসে জাহান্নামের আগুন ও তার মাঝখানে এই কন্যা দেয়াল হিসেবে দাঁড়াবে।Ñআয়েশা (রা); বোখারি, মুসলিম

বিধবা ও এতিম অসহায় মানুষের কল্যাণে নিরলস পরিশ্রমকারীর মর্যাদা আল্লাহর পথে জেহাদরত মুজাহিদের মতো। তার মর্যাদা সারারাত অবিরাম নামাজ আদায়কারী এবং সারাদিন রোজা পালনকারীর সমতুল্য।Ñআবু হুরায়রা (রা); বোখারি, মুসলিম

যে সমাজ দুর্বল ও দরিদ্রদের যথাযথ যত্ন নেয় না, তা নিঃস্ব, বঞ্চিত ও অবহেলিতদের কল্যাণ করার মধ্য দিয়ে তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করো। তোমরা তাদের ওসিলায় (প্রতিপক্ষের মোকাবিলায়) সাহায্য এবং রিজিকপ্রাপ্ত হও।Ñআবু দারদা (রা); আবু দাউদ, তিরমিজি

তোমার কন্যাসন্তানকে যদি তুমি জীবন্ত কবর না দাও (ভ্রূণ হত্যা না করো), তাকে অবহেলা না করো, তার ওপর ছেলেদের অগ্রাধিকার না দাও, তাকে স্নেহ-মমতা ও মর্যাদার সঙ্গে লালন করো, তবে তুমি এই কন্যার জন্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); আবু দাউদ। সূত্র: হাদিস শরিফ বাংলা মর্মবাণী

সাংবাদিক