এনআইডি কার্ড সংশোধনে ভোগান্তির অবসান হোক

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপ হয় সাম্যবাদী দলের। এতে দলটির নেতারা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ভুল সংশোধন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হন। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দলটি ইসিকে অনুরোধ জানিয়েছে। হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এনআইডি মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।

এনআইডি কার্ডে নানা ধরনের ভুল রয়েছে। স্বামীর নামের স্থলে পিতার নামা ছাপা হয়েছে। নাগরিক যেভাবে নামের বানান বলেছেন, সেভাবে লেখেননি সংশ্লিষ্ট কর্মী। এ ভুলগুলো নাগরিক করেননি। অথচ এমন ভুল সংশোধন করতে এসেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিদেশ থেকে, গ্রাম থেকে যারা আসেন, তারা ভোগান্তির শিকার হন। এনআইডি কার্ড সংশোধনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। সংলাপে সিইসিও স্বীকার করেছেন, ভুলের পরিমাণ এত বেশি যে, মনে হয় কোটি কোটি ভুল। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুবান্ধবের ৪০-৫০টি সংশোধন করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এনআইডি কার্ড নাগরিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ। এতে ভুল থাকায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন। ভুল থাকায় কারও চাকরি হচ্ছে না, কেউ বেতন পাচ্ছেন না, কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীরা হতদরিদ্র ও নিরীহ। তারা অর্থ বা ত্রাণ সহায়তা নিতে পারছেন না।

এনআইডি কার্ডের ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন অফিস এবং জেলা ও থানা নির্বাচন অফিসগুলোয় প্রতিদিনই দীর্ঘ লাইন পড়ে। সংশোধন হচ্ছে খুবই কম। দুঃখজনক বিষয় হলো, সামান্য ভুলও নানা অজুহাতে উপজেলা বা জেলা কার্যালয় সংশোধন করতে চায় না। যে ভুলের জন্য ইসির কর্মীরা দায়ী, সে ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। তথ্য সংশোধনের জন্য গুনতে হচ্ছে টাকা। কার্ড সংশোধনে মাসের পর মাস এবং অনেক ক্ষেত্রে বছরও লেগে যাচ্ছে।

সিইসির নির্দেশনার পর নাগারিক ভোগান্তির অবসান হবে বলেই আমরা মনে করি। ভোগান্তি দূর করতে ২০১৮ সালে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির সেবা কার্যক্রম। তাতেও ভোগান্তি কমেনি। ভুল সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেক অফিসে লেখাÑ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত।’ কিন্তু নাগরিকরা নির্ভুল পরিচয়পত্রই পাচ্ছেন না। নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অর্থ লেনদেনই শুধু দুর্নীতি! স্বীকার করতে হবে, যথাসময়ে সেবা না দেয়াও একধরনের দুর্নীতি। 

আমরা কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি না। অন্তত দ্রুত সেবাদান নিশ্চিত করতে হবে। কত দিনের মধ্যে কোনো সেবা পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এনআইডি এখন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও এনআইডি প্রয়োজন। ভুলত্রুটি সংশোধনে সহজ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। নাগরিকদের একটি নির্ভুল পরিচয়পত্র প্রদান করতে না পারা ইসির বড় ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য হবে। তাই সিইসির সর্বোচ্চ নির্বাহীর নির্দেশ যথানিয়মে পরিপালনে ইসি কর্মীদের দায়িত্ববান হওয়া জরুরি।