এনআইডি স্থানান্তর ইসির কফিনে শেষ পেরেক: মাহবুব তালুকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনবলসহ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাকে নির্বাচন কমিশনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেছেন আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা বোধগম্য নয়।’

গতকাল নির্বাচন কমিশন ভবনের নিজ কার্যালয়ে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর সম্পর্কে আমার বক্তব্য’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্যে তিনি বিষয়টিকে সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমি তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।’

তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদের যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত ২৪ মে, ২০২১ তারিখের পত্রে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ‘নির্বাচন কমিশন’-এর বদলে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচ্য। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজনির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নিতে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এছাড়া এতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র ভূ-লুণ্ঠিত হবে। এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। বিষয়টি কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের শামিল বলে অভিযোগ করে এই কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এযাবৎকালে এমন ঘোরতর দুর্দিন আর আসেনি। সংবিধানের ১০৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন।’ এটি কমিশনের জন্য রক্ষাকবচ হলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এখন কোথায়? আমি আশঙ্কা করি, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিম যাত্রার আয়োজন।