Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 9:44 pm

এনআরবিসি ব্যাংকের ভোক্তাঋণ গ্রাহকের জীবন করছে স্বাচ্ছন্দ্যময়

মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। এজন্য অল্প সময়ে মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই ব্যাংকের সেবাগুলো। সুনামের সঙ্গে সেবা দিয়ে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে ব্যাংকটি। অন্যান্য সেবার মতো ভোক্তা ঋণও অনেক আকর্ষণীয়। ঋণ আবেদন থেকে শুরু করে ঋণ অনুমোদন এবং পরবর্তী কার্যক্রম গ্রাহকরা অনলাইনে করতে পারছেন। এনআরবিসি ব্যাংকের স্বাচ্ছন্দ্যময় ভোক্তাঋণের প্রচলন এবং গ্রাহকদের চাহিদার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও  সিইও গোলাম আউলিয়া

শেয়ার বিজ: আপনাদের ব্যাংকের গ্রাহকদের ভোক্তাঋণের চাহিদা কেমন?

গোলাম আউলিয়া: ব্যক্তির প্রয়োজন মেটাতেই ভোক্তাঋণ প্রদান করা হয়। আমরা সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও পেশাজীবীদের সাময়িক প্রয়োজন মেটাতে ভোক্তাঋণ প্রদান করে থাকি। নির্দিষ্ট মাসিক আয়ের মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণিদের মাঝে ভোক্তাঋণের চাহিদা বেশি। এনআরবিসি ব্যাংক সারাদেশে প্রায় ১ হাজার ৬১৬টি স্থান থেকে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। মানুষের কাছে সহজেই এনআরবিসি ব্যাংকের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে অনেক গ্রাহকই প্রতিদিনই আসছেন এনআরবিসি ব্যাংকে।

শেয়ার বিজ : চাহিদার ধরনে কোনো পরিবর্তন আসছে কী নাÑযেহেতু সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে?

গোলাম আউলিয়া: মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অবশ্যই ঋণের চাহিদার একটা সম্পর্ক আছে। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মানুষ প্রথম সঞ্চয় ভেঙে প্রয়োজন পূরণ করেন। তারপর ব্যাংকে আসেন ঋণের জন্য। নিত্যদিনের বাজারের সঙ্গে ব্যাংকঋণের সম্পর্ক কম। যদিও অনেকেই এখন প্রতিদিনের বাজারও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা করছেন। খাবার, ওষুধপত্র, পোশাক-আশাক, মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি এখন অনলাইনে কেনাকাটা করা যায়। এসব বিলও এখন  ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও  কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। এসব কেনাকাটায়ও গ্রাহকরা ঋণ নিচ্ছেন। ৩/৬/১২ মাস তারও বেশি মেয়াদে এই বিল পরিশোধ করছেন গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকের ব্যবসাও অনেক সহজ হয়েছে, গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে। আমরা ভোক্তাঋণকে নিরুৎসাহিত করছি না। গ্রাহকদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ভোক্তাঋণ বিতরণ করছি।

শেয়ার বিজ : সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি যৌক্তিক কী না?

গোলাম আউলিয়া: ঋণ ও আমানতের সুদহার পরস্পর নির্ভরশীল। একটি বাড়লে অন্যটিও বাড়াতে হবে। আমাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সাল থেকে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তখন যে প্রেক্ষাপটে নেয়া হয়েছিল সেটি ঠিক ছিল। এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মূল্যস্ফীতি ক্রমেই বাড়ছে। আমানতকারী টাকা জমা রেখে যেহারে সুদ পাচ্ছেন, তা অনেক ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম। এজন্য সুদহার বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থেই চলছে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, যাতে আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না যাতে  বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। উভয়ের স্বার্থরক্ষা করে সুদহার নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সুদহার নিশ্চয় ইতিবাচক হবে।

শেয়ার বিজ : অনেক ব্যাংকে ভোক্তাঋণ নিতে গেলে অনৈতিক খরচের কথা শোনা যায়। এটা কতটা সত্য?

গোলাম আউলিয়া : ঋণ আবেদন থেকে শুরু করে গ্রাহক নির্বাচন, ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায় একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এককভাবে কোনো ব্যক্তির ঋণ দেয়ার এখতিয়ার নেই। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ ও সুদহার কত হবে, সেটিও পূর্বনির্ধারিত। অনেক ব্যাংকই এখন পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল সেন্ট্রালাইজড সিস্টেমে হচ্ছে। এনআরবিসি ব্যাংকও সেন্ট্রালাইজড লোন প্রসেসিং সিস্টেম (এলপিএস) সিস্টেম চালু করেছে। এখানে কোনো পর্যায়ে অনৈতিক কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। অনেকে ঋণ না পেয়ে মনগড়া অনেক অভিযোগ দাঁড় করান। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।    

শেয়ার বিজ: ভোক্তাঋণে খেলাপি কম। ব্যাংকগুলোকে ভোক্তাঋণে বেশিমাত্রায় ঝুঁকে পড়তে উৎসাহিত করছে কী না?

গোলাম আউলিয়া: ঋণ বিতরণের প্রধানত দুটি খাত। একটি হচ্ছে উৎপাদনশীল খাত, অন্যটি হচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাত। অর্থনীতির স্বার্থে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করা হয়। উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ালে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বহুমুখী প্রভাব পড়ে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হয়, রপ্তানির সুযোগ ঘটে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণের ঝুঁকিও কম।  তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে ব্যক্তির চাহিদার  বিকাশ ঘটেছে। আগে অনেক পণ্যকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও সময়ের প্রয়োজনে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আবশ্যিক চাহিদা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যে দীর্ঘদিন ভোক্তাঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসব ঋণে ফেরত আসার হার বেশি, খেলাপি ঋণ কম। তাই ব্যাংকগুলোও ভোক্তাঋণ বিতরণ বাড়াচ্ছে। ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে যথাসম্ভব সীমা পর্যন্ত ভোক্তাঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের পরিবর্তে ব্যক্তি খাতে বেশিমাত্রায় ঝুঁকে পড়ার সুযোগ কম।

শেয়ার বিজ : ভোক্তাঋণের জন্য নতুন কোনো প্রডাক্ট আনার পরিকল্পনা করছেন কী না?

গোলাম আউলিয়া: বিদ্যমান বাজারে গ্রাহকদের সব ধরনের চাহিদা পূরণের মতো আকর্ষণীয় প্রডাক্ট আমাদের রয়েছে। গাড়ি কেনা, প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, বাসার আসবাবপত্র কেনা, মোবাইল, টিভি কম্পিউটারসহ ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র কেনা ইত্যাদি খাতে ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকরি চাকরিজীবীদের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে তাদের পছন্দমাফিক শর্তে আমরা সহজেই ঋণ দিচ্ছি। আমাদের ক্রেডিট কার্ড অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে খুব শিগগির আমরা আরও কিছু নতুন প্রডাক্ট আনতে যাচ্ছি। আমরা আরও ক্ষুদ্র পরিসরে ঋণ বিতরণ করতে চাই। গ্রাম পর্যায়ে ভোক্তাঋণের আওতায় বাড়াতে চায়। এজন্য আমরা কাজ করছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বেশ কিছু নতুন প্রডাক্ট আমরা চালু করব। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আমরা নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছি।