দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট চলছে। অর্থনীতি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ না থাকলে সব বন্ধ। গত কয়েক বছরের উন্নয়নের প্রধান কারণ ছিল বিদ্যুৎ সংকট না থাকা।
এখন আমরা দেখছি লোডশেডিংয়ের জন্য কিছু সাশ্রয় হচ্ছে, কিন্তু এটি দেখছি না বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, অর্থনীতি স্থবির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত সমাধান করা না হলে গত কয়েক বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটা টেকসই উন্নয়ন হিসেবে থাকবে না। দেশ ও জাতিকে এজন্য বড় মাশুল দিতে হবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড সৃষ্টি এবং প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া নিঃসন্দেহে সরকারের সাফল্য। তবে দুই থেকে তিন মাস বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকারের অর্জন।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের বিষয় ছিল গ্যাস-তেল না পেলে এপ্রিলে বিদ্যুতে রেকর্ড ঘাটতি! সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলেছে, তীব্রতা কমে এলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও ফার্নেস অয়েল না পেলে মার্চ থেকে আবারও পুরোদমে লোডশেডিং ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
গ্যাসের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানায়। সেইসঙ্গে কিছু এলাকায় শিল্পে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে শিফট কমিয়ে এবং ইউনিট বন্ধ করে সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছেন তৈরি পোশাক, সিরামিক, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। পরিস্থিতির কবে উন্নতি হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ বাড়ছে।
এপ্রিলে ঘাটতি দেখা দেবে বলে যেহেতু আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। সঠিকভাবে লোড ম্যানেজমেন্ট গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন হারের মধ্যেও জনদুর্ভোগ কমাতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে পরিকল্পিত লোড ম্যানেজমেন্ট মেকানিজম দেখা যায় না। দেশের কিছু অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল না হলে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেত, সরকারের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে এমনটি মনে করিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। কভিড-বৈশ্বিক পরিস্থিতির অভিঘাতের কথা মানুষ জানে। এটি বারবার মনে করিয়ে দেয়ায় কোনো কৃতিত্ব নেই, বরং নিশ্চিত করতে হবে তেল-গ্যাস ঘাটতি পরিস্থিতির উত্তরণে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সাশ্রয়ী হওয়া এবং কৃচ্ছ্রসাধনের বিকল্প নেই। অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে, কোথায় বিদ্যুতের অপচয়-চুরি হয়। এসব খতিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তেল-গ্যাসের ঘাটতি নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।