Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 11:37 pm

এপ্রিলে চট্টগ্রাম কাস্টমসে ভয়াবহ রাজস্ব ধস

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে মার্চ থেকে দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শ্লথ হতে থাকে। এর ফলে দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠানটিও তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।

এপ্রিলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আহরণে মারাত্মক ধস নামে। এ মাসে লক্ষ্যমাত্রা থেকে তিন হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির। এতে বিদায়ী মাসে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ৫০ শতাংশের বেশি, যা নিকট অতীতের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব বিপর্যয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ৩৩ শতাংশ অবদান রাখা শুল্ক স্টেশনটি লকডাউনের পর থেকে রাজস্ব হারাতে শুরু করে। বিশেষ করে মার্চের মাত্র সাত দিনের লকডাউনের ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি হারায় ২৩ শতাংশের বেশি। কারণ ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন আর ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়।

মূলত তার পর থেকে আমদানি-রপ্তানি কমে যায়। এতে রাজস্ব আদায়ের হারও দ্রুত নামতে থাকে। তারপর পুরো এপ্রিল লকডাউনের মধ্যে অতিবাহিত হয়। এতে চরম রাজস্ব সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। কোনো অবস্থাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস।

তবে ফেব্রুয়ারি মাসে চলতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। মে মাসে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। তারপর কভিট-১৯-এর প্রভাবে মার্চ ও এপ্রিলে সেই হার ধরে রাখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। মার্চে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৩৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।

অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার চার দশমিক ২১ শতাংশ ঋণাত্মক, যা এপ্রিলে এসে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। বিদায়ী মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ১০৬ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র দুই হাজার ১২৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬৫ দশমিক ১৯ শতাংশ পিছিয়ে। আর গত বছরের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি তুলনা করলে ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ পিছিয়ে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১০ মাস শেষে মোট প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ঋণাত্মক। অর্থাৎ কোনো প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি। বিপরীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে চলতি বছরের অন্যান্য মাসের চিত্রও তেমন ভালো নয়।

শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে ১৯ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিল। এছাড়া বছরের শুরুতে অর্থাৎ জুলাই মাসে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। তারপর আর কোনো মাসে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। সব মাসে প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক ছিল। আর সর্বশেষ দুই মাসে তো মারাত্মক সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে অর্থবছর শেষ হতে বাকি দুই মাস। তার ওপর চলতি মাসও লকডাউনের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। ফলে মে মাসেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে ধারণা করছে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা। প্রথম ১০ মাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। আর পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি কমার পাশাপাশি প্রায় বন্ধ আছে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানিও। এতে রাজস্ব আদায়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে কয়েকশ’ বিল অব এন্ট্রি দাখিল হচ্ছে, যেখানে দৈনিক পাঁচ থেকে সাত হাজার বিল অব এন্ট্রি দাখিল হতো। লকডাউনের পর থেকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, শিল্পের কাঁচামাল-জাতীয় জরুরি পণ্য ছাড়া উচ্চ শুল্কের পণ্য তেমন ছাড় হচ্ছে না। ফলে রাজস্বও আগের মতো আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে চলতি মাসে রাজস্ব আহরণের চিত্র আরও খারাপ হবে।’