শেয়ার বিজ ডেস্ক: ট্যাংকের পর এবার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে যুদ্ধবিমান চাইছে ইউক্রেন সরকার। বলা হয়েছে, মিত্রদের কাছে চতুর্থ প্রজšে§র মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চাইবে ইউক্রেন। খবর: সিএনএন।
চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে ট্যাংক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রসঠহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক ট্যাংক চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
কয়েক সপ্তাহের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত বুধবার জার্মানি জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক দেবে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দেবে বলেও জানিয়েছে। এর আগে দেশটিকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দেয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
যুদ্ধ শুরুর বছরখানেকের মাথায় এসে মিত্রদের কাছ থেকে ট্যাংক পাওয়ার ঘোষণা ইউক্রেনের জন্য অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে দেশটি এতেই খুশি নয়; এবার দেশটির চাওয়া অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভের উপদেষ্টা ইউরি সাক বলেন, পরবর্তী বড় চাওয়া হবে যুদ্ধবিমান। ইউরি সাক আরও বলেন, আমরা যদি সেগুলো (যুদ্ধবিমান) পেয়ে যাই, তবে যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জনগুলো অপরিসীম হবে…এটা শুধু এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নয়। এটা চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যা আমরা চাই।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর কাছে সাবেক সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান রয়েছে। পুরোনো এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে শক্তিশালী রুশবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। তাই চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা কিয়েভের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও দেশটিকে অস্ত্রসহায়তা নিয়ে বিতর্ক-সমালোচনা রয়েছে; এরপরও যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো অর্থ-অস্ত্রসহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
ইউরি সাক বলেন, তারা (মিত্ররা) আমাদের শুরুতে ভারী কামান দিতে চায়নি, পরে দিয়েছে। এমনকি রকেটুব্যবস্থা হিমার্স দিতে চায়নি, পরে সেটাও দিয়েছে। তারা আমাদের ট্যাংক দিতে চায়নি, এখন ট্যাংকও দিচ্ছে। পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া এমন কিছু নেই, যা আমরা পাব না।
তবে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি আগেও বলেছি, ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেয়ার বিষয়ে মিত্রদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি; আমি এখনও সেটাই বলছি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সেনারা অংশ নেবেন না বলেও জানান ওলাফ শলৎজ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে আমরা স্থলবাহিনী পাঠাব না। আমি বলেছি, ন্যাটোর সেনারা ইউক্রেন যুদ্ধে কখনোই প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হবে না। এখন পর্যন্ত এটা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। সবাই এ কথার ওপর আস্থা রাখতে পারেন।
ওদিকে ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ইউক্রেনকে ভারী ট্যাংক সরবরাহ করে, তবে তা যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংস করা হবে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, কারিগরি দিক থেকে এটা ব্যর্থ পরিকল্পনা। এটি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে বাড়তি সুবিধা দেবে, এ রকম ধারণার অতিমূল্যায়ন। অন্য যুদ্ধ সরঞ্জামের মতো এই ট্যাংকও পোড়ানো হবে। পার্থক্য শুধু, এগুলো অত্যন্ত দামি।
যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার-২, জার্মানির লেপার্ড-২ এবং মার্কিন তৈরি আব্রামসসহ পশ্চিমা ট্যাংকগুলো সোভিয়েত যুগের একই ধরনের ট্যাংক যেমন টি-৭২ এর চেয়ে উচ্চমানের। এ ট্যাংকগুলো ইউক্রেনীয় বাহিনীর সদস্যদের আরও বেশি সুরক্ষা, গতি এবং নির্ভুলতা দেবে। কিন্তু পশ্চিমা আধুনিক প্রধান যুদ্ধ ট্যাংকগুলো নিজেরাই কোনো বিস্ময়কর অস্ত্র বা গেম-চেঞ্জার নয়। বরং সেগুলোর সঙ্গে অন্য কী ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
জার্মানির তৈরি লেপার্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আব্রামস ট্যাংকের মধ্যে মূলত ইঞ্জিনই বড় পার্থক্য তৈরি করেছে। লেপার্ড-২ ট্যাংকের ইঞ্জিন এমটিইউ এমবি৮৭৩ ডিজেল ইঞ্জিন। এতে দুইজন ক্রু। এর সর্বোচ্চ পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার। ঘণ্টায় গতি ৭২ কিলোমিটার। এর অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রাইনমেটাল ১২০ এমএম এল৫৫ স্মুথবোর বন্দুক, কোয়াক্সিয়াল ৭.৬২এমএম মেশিনগান এবং ৭.৬২এমএম অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট মেশিনগান। আব্রামসের ১৫০০ এইচপি গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন। এর ক্রু আছে চারজন। সর্বোচ্চ পাল্লা ১ হাজার ৫ কিলোমিটার ও সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এম২৫৬১২০এমএম স্মুথবোর ক্যানন, ১২.৭এমএম মেশিনগান এবং ৭.৬২এমএম এমএম২৪০ মেশিনগান।