এবার পহেলা বৈশাখে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আর মাত্র দিন কয়েক পরেই বাংলা নববর্ষ শুরু হতে চলেছে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে বঙ্গাব্দ ১৪৩২। পুরোনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে স্বাগত জানানোর এ দিনটি সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। কালক্রমে বর্ষবরণে আসে পরিবর্তন। প্রতিবার নতুন বছরকে বরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ রাজধানীতে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের করে থাকে। এই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে রাজধানীতে নববর্ষের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। খবর : বাসস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এই তথ্য জানানো হয়। পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের বিভিন্ন দিক জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম এবং ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেই নাম দিয়ে চারুকলায় নববর্ষে শোভাযাত্রার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।’

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, এই শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যে দুটি বার্তা আছে। একটি হচ্ছে, রাজনৈতিক ও সামাজিক নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সেই বিষয়টি তুলে ধরা। কিছু মোটিভ সেই কাজটি করছে। আর দ্বিতীয় যে অংশটি আছে, তা হলো মূলত ঐক্যের ডাক, সম্প্রীতির ডাক।

সংবাদ সম্মেলনে একই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখ বলেছেন, এটিকে আমরা নাম পরিবর্তন বলতে চাই না। নাম পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে যখন আমরা শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরবর্তী সময় এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিবর্তন হয়। ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, আনন্দ শোভাযাত্রা নামে ১৯৮৯ সালে যে আয়োজনটি হয়েছিল, সেটির স্বতঃস্ফূর্ততা কেমন ছিল। আর পরবর্তীকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার সময়ে তার স্বতঃস্ফূর্ততা কেমন ছিল।

তিনি আরও বলেন, এ কারণে আমরা পরিবর্তন বলছি না। আমরা বলছি, সেই আনন্দ শোভাযাত্রাকে আমরা পুনরুদ্ধার করেছি।

উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বা মিত্রশক্তির জয় কামনা করে জাঁকজমকভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কথা শোনা যায়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও একইভাবে ঘটা করে বাংলা নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ইংরেজ শাসনামলে বা ঔপনিবেশিক ভারতের মধ্যে বাংলা নববর্ষ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নববর্ষ উদযাপনের জন্য শান্তিনিকেতনে এলাহী আয়োজন করতে থাকেন। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ থেকে শুরু করে তার অনেক গান পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে যায়।

ব্রিটিশ আমলের পর পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন মূলত পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহƒত হয়। কারণ সে সময় আইয়ুব খানের সরকার বাঙালিদের নববর্ষ উদযাপনে বাধা দেয়। বাঙালি মনীষীদের জš§দিন বা রবীন্দ্র জš§শতবর্ষ উদযাপন নিষিদ্ধ করা, কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন লেখাকে কাট-ছাঁট করা বা তার লেখার সাম্প্র্রদায়িকীকরণ হয়।

দেশ স্বাধীনের পর আড়ম্বরপূর্ণ হতে থাকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন। আশির দশকের শেষ দিকে স্বৈরশাসনের সময় পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান আবার প্রতিবাদের ভাষায় রূপ নেয়। এই সময়ে এসেই ১৯৮৯ সালে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যোগ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এরপর পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সব ধরনের মানুষের অংশগ্রহণে একটি প্রধান অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।