এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান যখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী!

নিয়াজ মাহমুদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এমএ আউয়ালের নামে ব্যাংকটির মাত্র চার হাজার ২২২টি শেয়ার রয়েছে। এর বর্তমান বাজারমূল্য ৭৩ হাজার ৪০ টাকা। পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের কোনো শ্রেণিবিন্যাস না থাকলেও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কোটাভুক্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পরিচালক হওয়ার জন্য দুই শতাংশ শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছেন এমএ আউয়াল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিএসইসি নির্ধারিত উদ্যোক্তা পরিচালকদের সমন্বিতভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর বিপরীতে ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে এবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা এ শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে প্রত্যেক পরিচালককে পৃথকভাবে কোম্পানির ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবি ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে এবি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মহাদেব সরকার সুমন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সিকিউরিটিজ আইন মেনেই তিনি (এমএ আউয়াল) ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনক্রমেই তিনি সম্প্রতি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।’

জানা গেছে, এবি ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য ১১ জন। এর মধ্যে দুজন স্বাধীন বা স্বতন্ত্র পরিচালক। বাকি ৯ জন শেয়ারহোল্ডারধারী পরিচালক। এবি ব্যাংকের মোট ৭৫ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার লেনদেনযোগ্য। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল ছাড়া বাকিদের দুই শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের নামে রয়েছে মাত্র চার হাজার ২২২টি শেয়ার, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশেরও কম। এমএ আউয়ালের নামে থাকা শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৭৩ হাজার ৪০ টাকা (শেয়ারপ্রতি দর ১৭ টাকা ৩০ পয়সা হিসেবে)।

জানা গেছে, বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজšে§র এ ব্যাংকটিতে কর্মকর্তা ছিলেন এমএ আউয়াল। এরপর কাজের দক্ষতায় ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও অধিষ্ঠিত হন এই ব্যাংকার। ২০০৮ সালে তিনি এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। টানা কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গত ডিসেম্বরে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এদিকে বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির স্বাধীন বা স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া বাকি সব পরিচালকেরই পৃথকভাবে ওই কোম্পানির ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। পরিচালক যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মনোনীতও হন, তাহলে ওই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের নামে দুই শতাংশ শেয়ার ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদিকে পরিচালকদের প্রত্যেকের (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) পরিশোধিত মূলধনের দুই শতাংশের নিচে শেয়ার ধারণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ২১৯ পরিচালক ন্যূনতম শেয়ার ধারনে ব্যর্থ। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কমিশন।

অন্যদিকে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নেই ৭৮টি কোম্পানির। এ-সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনকারী পরিচালক ও কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

২০০৯ ও ২০১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনেক উদ্যোক্তা-পরিচালক হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। এ নির্দেশনাটি জারির পর থেকেই বিভিন্ন কোম্পানি, বিশেষ করে ব্যাংকের পরিচালকরা ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত থেকে ব্যাংকগুলোকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান। সে সময় কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালক বিএসইসির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলাও করেন। মামলায় হেরে গিয়ে পর্ষদ সদস্যপদও ছাড়তে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পরিচালকদের।

কমিশন বলছে, এ ধরনের পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এ বিষয়টি এনফোর্সমেন্টে পাঠানোর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) মোট পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে যারা ব্যর্থ হয়েছেন, ওইসব কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের উল্লিখিত শেয়ার ধারণ নিশ্চিতকরণের জন্য নির্দেশনা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

কোনো কোম্পানির মালিকানায় পরিচালকদের অংশগ্রহণ বেশি থাকলে কোম্পানির প্রতি তাদের আগ্রহ ও দায়িত্ববোধও বেশি থাকে। তাই এটির বিষয়ে সব পক্ষকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ বাজার-সংশ্লিষ্টদের।