এমইবি ইন্ডাস্ট্রিয়ালের বিরুদ্ধে এবি ব্যাংকের মামলা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বাবার মতো ছেলেও এখন ব্যাংকিং জগতের ঋণখেলাপি। একদিকে বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের দায়ে কারাগারে বন্দি ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলিয়াস

ব্রাদার্স (এমইবি) গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম। তার ছেলে মোহাম্মদ শোয়েব রিয়াদ এখন এবি ব্যাংকের একজন ঋণখেলাপি গ্রাহক হয়েছেন।

এ ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন এমইবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের কাছে এবি ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার পাওনা ১০৮ কোটি এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এ খেলাপি পাওনা পরিশোধে তিনি একাধিকবার ব্যর্থ হন। আর এ টাকা আদায়ে ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এমইবি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইলিয়াছের মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন বড় ছেলে মোহাম্মদ শামসুল আলম। তার ও অন্যান্য পরিচালকের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ২০১০ সাল থেকে ব্যবসায় লোকসান ও মন্দার ছোঁয়া লাগে। আর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে একের পর এক ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে চেক প্রতারণা ও খেলাপি ঋণের দায়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে।

অপরদিকে একই সময় তার ছেলে মোহাম্মদ শোয়েব রিয়াদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে নাহার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এ গ্রুপের এমইবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এখন এবি ব্যাংকের খেলাপি তালিকায়। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে এবি ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার সুদাসলে মোট পাওনা ১০৮ কোটি এক লাখ টাকা। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয় এমইবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স।

এ পাওনা আদায়ে এবি ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা গত ২০ নভেম্বর ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা মৌজার ১৯১ শতক এবং ঢাকার উত্তরায় ৩৬ দশমিক ৫২ শতক বন্ধকে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পুনঃতফসিলকরণের জন্যও আবেদন করেনি।

ব্যাংক ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০০৮ সালের দিকে এমইবি গ্রুপের ব্যবসায় মন্দার কারণে এ গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান এখন শুধু কাগুজে প্রতিষ্ঠান। সে সময় তেল ব্যবসায় লোকসান আর রাজনৈতিক মনোযোগের কারণে ঋণখেলাপি হয় একাধিক ব্যাংকে। অপরদিকে একই সময় তার ছেলে মোহাম্মদ শোয়েব রিয়াদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে কৌশলে নাহার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মূলত খেলাপির কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিন্ন নামে ছেলেকে ব্যবসায় নিয়ে আসেন শামসুল আলম। এতে কিছু ব্যাংক সহযোগিতা করে। আর কিছু ব্যাংক ঝুঁকি আছে বুঝতে পেরে অর্থায়ন থেকে বিরত থাকে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে চট্টগ্রামের বাকলিয়ার মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্যবসায় আসেন। আর স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বর্তমান ইউনিলিভারের প্রধান পরিবেশক হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন প্রায় তিন যুগ। পরে ২০০০ সালের দিকে ইউনিলিভারের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে তোলে মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স। এ সময় ভোজ্যতেল আমদানি ও বিপণনে নেতৃত্ব দেয় মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স। পাশাপাশি দাদা সয়াবিন তেল, ড্রিংকিং ওয়াটার, গ্লাস, নিটিংসহ একাধিক ব্যবসা শুরু করে গ্রুপটি। পরবর্তীকালে গ্রুপটির মালিকানায় আসেন দুই ভাইয়ের সন্তান। ২০০৫-০৬ সালের দিকে ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য ব্যবসায় অনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বে ব্যবসায়িকভাবে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে এমইবি গ্রুপ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মঈন উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে পারব না। আপনি আমাদের স্পেশাল এসেট ডিভিশনের সঙ্গে কথা বলুন।

পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই শাখার একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, চলতি মাসের ১০ তারিখে খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে এমইবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে সুদাসলে আমাদের পাওনা ১০৮ কোটি টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পুনঃতফসিলকরণের জন্য  কোনো আবেদন প্রস্তাবও পাওয়া যায়নি।  

খেলাপি ঋণ ও মামলা বিষয়ে এমইবি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব রিয়াদের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহƒত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার গোলপাহাড়ের অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিস তালাবদ্ধ। পরে ভবনের নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সকালে একবার অফিস খুলেছিল। তবে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।