Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 12:08 pm

এমএফএস সেবায় শৃঙ্খলা আনয়নে মনোযোগ দিন

দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের চেয়ে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে ওঠে এসেছে, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের তুলনায় এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।

সহজেই বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও লেনদেনের সুবিধার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এমএফএসই এখন আর্থিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। বলা হয়ে থাকে, দেশে এমএফএস সেবার মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কারণ আছে বেশ, এমএফএসে সঞ্চয় করা, ঋণ নেয়া ও রেমিট্যান্স পাঠানোর মতো বিভিন্ন পরিষেবা যুক্ত হয়েছে। এসব কারণে দেশের শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সবখানেই মোবাইলে আর্থিক সেবার গ্রাহক বাড়ছে। দেশে বিকাশ, নগদ, উপায়সহ বেশ কিছু মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রাহক নিজের মোবাইল ব্যবহার করে অথবা এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর নিযুক্ত এজেন্ট পয়েন্ট থেকে লেনদেন করতে পারেন। বর্তমানে সঞ্চয় ও ঋণের মতো সুবিধাও দিচ্ছে কিছু এমএফএস প্রতিষ্ঠান।

ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্টতা থাকায় সরকারি কিছু সেবা নগদের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময় আর্থিক অসততার অভিযোগ আসে নগদের বিরুদ্ধে। মুদ্রা সংরক্ষণ নীতিমালার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকা ইস্যু করার অপরাধে নগদ লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে অন্য অভিযোগও ছিল। নগদে যখন অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে গত ২১ আগস্ট ডাক বিভাগের এমএফএস ‘নগদ’-এ প্রশাসক দল নিয়োগ করে। ডাক বিভাগের সম্মতিতে এ প্রশাসক দল নিয়োগ করা হয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরীক্ষায় তারা ব্যাংকে অর্থ জমা না দিয়ে ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরি করাসহ কিছু আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায়। এ ছাড়া কতকগুলো পরিবেশক হিসাব থেকে অননুমোদিতভাবে সরকারি ভাতার ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা চিহ্নিত করা হয়। এসব অনিয়মের ঘটনা উদ্ঘাটনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে।

এবার সত্যিই নগদের দায়িত্ব পেয়েছে ডাক অধিদপ্তর। নগদে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসকের কার্যক্রমের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ দেয়ায় পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেয় ডাক অধিদপ্তর।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে মোবাইলে আর্থিক সেবায় সাধারণ মানুষের অভিগম্যতা বেশি। সরকার নগদসহ সব এমএফএস সেবাকে জনবান্ধব করতে নীতিমালা যথাযথ পরিপালন নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।