এমন তাপদাহ ‘আরও কয়েক দিন’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশজুড়ে টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; বৈশাখের শুরুতে বৃষ্টিহীন এই সময়ে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে ঢাকায়। গতকাল রোববার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুননেসা বলেন, রোববার ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যত্র বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। আরও দুই-তিন দিন এমন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

এপ্রিলের দুই সপ্তাহ ধরে দেশের কোথাও হালকা বৃষ্টিও নেই। ঢাকায় সবশেষ ১ ও ২ এপ্রিল এক মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছিল। ২ ও ৪ এপ্রিল ঢাকার বাইরে কয়েকটি এলাকায় হালকা বৃষ্টি ছিল। আর ৪ এপ্রিল সিলেটে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাত না  থাকায় তাপমাত্রা বেড়েই চলছিল। এখন দু-এক দিন তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ সময় অসহনীয় গরমের মধ্যেই যেতে হবে। সপ্তাহের শেষে ঝড়বৃষ্টির আভাস রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগামী তিন দিন পর হালকা ঝড়-বৃষ্টির আভাস রয়েছে। ২০ এপ্রিল রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ ছাড়া দেশের অন্যত্র হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তাপমাত্রা বাড়ায় বেশ গরম অনুভব হলেও বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় ততটা অস্বস্তিকর হয়নি। আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে পারে। এ সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পও ধীরে ধীরে বাড়বে। দুদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতা বাড়তে থাকবে। তাতে শরীরে ঘাম হবে। তাপমাত্রা কমলেও গরমের অস্বস্তি বাড়বে বেশি। ১৯-২০ এপ্রিলের দিকে হালকা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে।

চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহের পাশাপাশি মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, এপ্রিল-মে মাসে সাধারণত এ ধরনের তাপমাত্রা থাকেই; কখনও কখনও আরও বেশি থাকে। তবে তীব্রতা কম-বেশি থাকতে পারে। এপ্রিল মাসে যে ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে গেল, তাতে আগামী মে মাসে এটা আরও বেশি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, চুয়াডাঙ্গার নিচেই সাতক্ষীরা। দুই দশক আগেও সাতক্ষীরায় রেকর্ড তাপমাত্রা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আশপাশের এলাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে, কিন্তু ৪৩-এ ওঠেনি। যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা, খুলনারও কিছু অংশÑএসব এলাকায় তাপপ্রবাহ থাকছে। কিন্তু এসব জায়গার পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহের সময় শ্রীমঙ্গলও যুক্ত হয়।

ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) সাবেক চেয়ারম্যান সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘তার মানে আসল জায়গাটা হচ্ছেÑসাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী অঞ্চলই আমাদের হিটওয়েভ ও কোল্ডওয়েভের জায়গা। তাপপ্রবাহপ্রবণ এসব এলাকা দিয়ে শৈত্যপ্রবাহও একইভাবে প্রবেশ করে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে গরমকালে যেটা হিটওয়েভ নিয়ে আসে, সেখান দিয়েই শীতকালে কোল্ডওয়েভ নিয়ে আসে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছেÑবিহার, ওয়েস্টবেঙ্গল, বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন ওড়িষার কিছু এলাকা কমপ্লিটটি ফাঁকা। মেঘ নেই, সূর্যের আলো পড়ার পর স্বাভাকিভাবে হিট এনার্জি বেশি হয়ে যাচ্ছে এ ফাঁকা জায়গায়। এরপর পশ্চিম দিক থেকে বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে মেঘগুলো আসে, সেগুলো ঝাড়খণ্ড, ওয়েস্টার্ন বিহার ও ওড়িষা থেকে এসে ভ্যানিশ হয়ে যায়। ওয়েস্টবেঙ্গল, বিহার ও বাংলাদেশের উষ্ণমণ্ডলীয় উচ্চ চাপবলয় সক্রিয় থাকে। বঙ্গোপসাগর থেকে ময়েশ্চার আসতে পারে না। বৃষ্টি হওয়ার জন্য যে লো প্রেশার দরকার হয়, বিহার ও ওয়েস্টবেঙ্গল এলাকায় সেটা তৈরি হচ্ছে না।’ সাবেক এ আবহাওয়াবিদের ধারণা আরও দু-চার দিন তাপপ্রবাহ চলতে পারে। এরপর একবার বজ্রঝড় ও বৃষ্টির প্রবণতা শুরু হলে তা কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও তাপপ্রবাহের দিক বিস্তৃত হওয়ায় ঢাকার মানুষকেও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সমরেন্দ্র কর্মকার।

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক দশকে ৩৯ দশমিক ৫ পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল। কিন্তু এখন হিটওয়েভের এক্সেটশন পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আকাশে মেঘ না থাকলে সূর্যের রশ্মিটা পড়ে, কংক্রিটের শহর হিট অ্যাবজর্ভ করে সহজে। আরবানাইজেশনের কারণে তাপপ্রবাহ বাড়ছে।’