নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: তৈরি পোশাকে ১২ শতাংশ, টেক্সটাইলে ১৫ শতাংশসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিতে প্রাণোদনা দেয়ার সংস্কৃতি চালু আছে, যা যুগের পর যুগ চলতে পারে না। আর সারাজীবন এ সংস্কৃতি চালু রাখাও সম্ভব নয়। আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের আর প্রাণোদনা দেয়া সম্ভব হবে না। এ সুযোগ বন্ধ হবে। তার জন্য আপনার প্রস্তুত হোন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করের বোঝা বাড়বে না, বরং করের বোঝা কমানোর চেষ্টা থাকবে। পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানোয় কর অটোমেশনের চালু করার জন্য কাজ করছি বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামে এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর ব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণ ও সুশাসন নিশ্চিত করে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চাওয়ার কথাও জানান তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার করের বোঝা বাড়ানো হবে না, পারলে কমানোর চেষ্টা করা হবে। এটা আমাদের এবারের বাজেটের মূলনীতি। এর জন্য আমাদের ব্যবসায়ীদের সৎ মানসিকতার মানুষ হতে হবে। দেখা যায়, জাপান থেকে একটি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকায়, কিন্তু দেখানো হয় ১৫ টাকা লাখ আমদানি। অথচ গাড়ি বিক্রি হচ্ছে ঠিক ৪০ লাখের বেশি। যদি ২০ লাখ বিক্রি হতো, তাহলে আমদানিমূল্য কম ছিল মানতাম। একইভাবে বন্ড সুবিধায় কাপড় আনার হচ্ছে, যা লোকাল বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। রপ্তানি কম হচ্ছে। এসব কারণে এনবিআর বন্ড কর আদায়ে কড়াকড়ি করছে। আপনারা যদি সৎ ও সঠিক হিসাব দেন আমরা ভ্যাট ও কর কমিয়ে দেব। আমাদের ইচ্ছা সবার জন্য একক ভ্যাট হার নির্ধারণ করা।’
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কম জিডিপির দেশ বাংলাদেশ। আমাদের এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি করদাতা আছে। অথচ মাত্র ৪৫ লাখ রিটার্ন জমা করেন। এর মধ্যে ২৫ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্নে ফাইল সাবমিট করেন। কর আদায়ের ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা চ্যালেঞ্জিং কাজ। তাই আমরা কর আদায়ে পুরোপুরি অটোমেশনে দিকে যাচ্ছি।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবার বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা বেশি। আরএমজি সেক্টর প্রত্যাশা করে রপ্তানিবান্ধব বাজেট। আমরা রপ্তানি করে দেশ সমৃদ্ধ করতে চাই, কর্মসংস্থান করতে চাই। আইন সহজ না করলে জটিল প্রক্রিয়ায় রপ্তানি বাড়বে কীভাবে। সারাবছর অডিট নিয়ে ঘুরতে হলে ব্যবসা করব কখন। ভ্যাট থেকে রপ্তানি খাতকে বাদ দিতে হবে।
গোল্ডেন সনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ বলেন, এসআরওর বেড়াজাল বিপজ্জনক। বিচারাধীন থাকাবস্থায় পণ্য আমদানি করা যাবে না শতভাগ কর দেওয়া ছাড়া। ইজি অব ডুয়িং বিজনেস পলিসি চাই।
আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, জাহাজ থেকে লোহার জোগান দিচ্ছি। আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা জাহাজ ভাঙায় প্রতি টনে ১ হাজার ৫০০ টাকা কর দিই। অথচ বিদেশ থেকে সরাসরি যারা আমদানি করেন তারা টনে এক হাজার টাকা কর দেন। দোকান মালিক সমিতির নেতা সালেহ আহমদ সোলাইমান বলেন, একক দোকান মালিকদের অডিট থেকে বাদ দিন। গ্রীষ্মকালে লাইসেন্স নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলে বর্ষাকাল এসে যায়। আমরা কর সুরক্ষা কমিটি চাই।
ফ্রেশ ফুডস আমদানিকারক মাহবুব রানা বলেন, আমরা যারা ম্যানুফ্যাকচারার নই, বছরে একবার ভ্যাট রিটার্ন দিতে চাই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রতিকেজি আম রপ্তানিতে বিমানভাড়া ৭০০ টাকা, অথচ ভারতের প্রতিকেজি ২৫০ টাকা। আবার আমরা তিন বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানি করি, কিন্তু পাবত্য জেলায় চাষ করা কঠিন নয়। অনাবাদি জমিতে সয়াবিন চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক আনোয়ার পাশা বলেন, চেম্বারের সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি চেম্বারের পক্ষ থেকে এনবিআরকে আয়কর বিষয়ে ১৯টি, ভ্যাটের ওপর ৪০টি ও শুল্ক-সংক্রান্ত ৫৫টি প্রস্তাব দেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, কনটেইনার ডিপোতে ক্রেন আনি আট কোটি টাকায়। আর ট্যাক্স দিতে হয় এক কোটি টাকা। এটা করমুক্ত করার প্রস্তাব করছি। শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ বাজারকে স্ট্রং করতে হবে। ডাবল টেক্স পলিসি থেকে সরে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনায় চট্টগ্রাম চেম্বার, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বার, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার, কক্সবাজার চেম্বার, রাঙামাটি চেম্বার, বিজিইএমই, বিকেএমইএ, ফ্রেশ ফুড আমদানিকারক, জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ী, পান রপ্তানিকারকসহ বিভিন্ন ধরনের ট্রেডবডির সদস্য, শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।