সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি বছরের অক্টোবরের শুরুর দিকে ‘নিষেধাজ্ঞা’ আরোপিত রাষ্ট্র ইরান থেকে ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ ও ‘গ্যাস জিএমএস’ ট্যাংকারে করে অবৈধভাবে এলপিজি আমদানি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে একটি চিঠি দেন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা লোয়াবের সভাপতি ও ইস্টকোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী। তিনি গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন। কিন্তু এ অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান থেকে কোনো এলপিজি আমদানি হয়নি।
আজম জে চৌধুরীর এই চিঠি ১১ সেপ্টেম্বর সংগঠনের মহাসচিবের নামে প্রদান করা হয় এবং নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার কাছেও একই অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল কুতুবদিয়ায় জাহাজ দুটি পরিদর্শনও করেছে। যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি কমিটি। গতকাল কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ ও ‘গ্যাস জিএমএস’ ট্যাংকার সর্বশেষ ১০টি পোর্টের অবস্থান যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় জাহাজ দুটি ‘নিষেধাজ্ঞা’ আরোপিত রাষ্ট্র ইরানে যাতায়াত করেনি। সুতরাং ইরান থেকে এলপিজি আমদানি করা হয়নি। এ কমিটির কোনো সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, অভিযোগ ছিল মিথ্যা। একজন ব্যবসায়ী কীভাবে দেশের ও ব্যবসায়ীদের মানসম্মান নিয়ে এমন একটি মিথ্যা কথা বলতে পারেন? অপরদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, লোয়াব সভাপতির পক্ষ থেকে ইরান থেকে দুটি ট্যাংকারে করে অবৈধভাবে এলপিজি আমদানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তার সত্যতা পায়নি আমাদের তদন্ত কমিটি।
আরও অভিযোগ তোলা হয়, আজম জে চৌধুরী যে দুটি জাহাজের এলপিজি খালাস বন্ধের আহ্বান করেছিলেন, সেই দুই জাহাজে এলপিজি আমদানি করেছিল যমুনা স্পেকটেক জয়েন্ট ভেঞ্চার, টিএমএসএস এলপিজি, বিএম এনার্জি, এনার্জিপ্যাক, ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস, মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি ও জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এমন অভিযোগ আনেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এলপিজি খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, মূলত আজম জে চৌধুরীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দেন দুই জাহাজের আমদানিকারকসহ এলপিজি খাতের ১১ ব্যবসায়ী। তারা বলেন, সংগঠনের সদস্যদের মতামত ছাড়া এই চিঠি ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা। আজম জে চৌধুরী ওমেরা এলপিজি লিমিটেড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ‘এমজেএল সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের’ মাধ্যমে বাংলাদেশে একচেটিয়া এলপিজি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে চান। অতিরিক্ত মূল্যে এলপিজি আমদানি ও সরবরাহ দেখিয়ে সিঙ্গাপুরের কোম্পানিতে অর্থ স্থানান্তর করারও অভিযোগ করা হয় চিঠিতে।