এলসির গতি হ্রাস যেন ক্ষতির কারণ না হয়

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘চলতি অর্থবছরের ১১ মাস: এলসি খোলা কমেছে ২৩ বিলিয়ন’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে। বাণিজ্যের আড়ালে সংঘটিত অর্থ পাচার রোধকল্পে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপের কারণে এত ব্যাপক হারে এলসি খোলা কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন। কিন্তু বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যাতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে, এলসি খোলা কমে যাওয়ার প্রভাবে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ঋণ কমে যাওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আর উৎপাদন কার্যক্রম বিঘিœত হলে কারখানাও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও বহুলাংশে ‘ট্রেডবেজড’ বা বাণিজ্যভিত্তিক। এখানে ম্যানুফাকচারিং খাত এখনও বড় কোনো ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি। ফিনিশড গুডস আমদানির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অনেক জরুরি পণ্য দেশে উৎপাদন হয় না। সেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়।

বলা হয়ে থাকে যে, আমরা তৈরি পোশাক খাতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু এ শিল্পের সিংহভাগ প্রাথমিক ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, যে ওষুধ শিল্প নিয়ে এখন আমরা এতটা গর্বিত, সেই ওষুধ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। এর পাশাপাশি দেশের নির্মাণ শিল্পের জন্য যে ইস্পাত প্রয়োজন হয়, তার প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহার জোগান আসে পরিত্যক্ত জাহাজ কাটার মাধ্যমে। সেই জাহাজও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর বাইরে সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পরে বেশি হারে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হলে তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ বেশ কিছু দিন ধরে ডলারের সংকটে ভুগছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার হার ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও ডলার সংকটের কারণে বিঘিœত হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে জমা হচ্ছে, তা দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানোর পর আইএমএফের শর্ত পূরণের মতো ন্যূনতম রিজার্ভ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটারি ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দক্ষতার পরিচয় দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।