Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 4:02 am

এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ চায় ঢাকা ওয়াসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারও দাম বৃদ্ধির চিন্তা করছে ঢাকা ওয়াসা। এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সবাই আর এক দামে পানি পাবে না। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষকে পানির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি দিতে হবে, কম টাকায় পানি পাবেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনার কথা জানান সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।

তিনি বলেন, পানির যা উৎপাদন খরচ, তার চেয়ে অনেক কম দামে পানি দেয়া হয়। বাকিটা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। দুঃখজনক হলো এ ভর্তুকি উচ্চবিত্তরাও পাচ্ছেন, যদিও তাদের তা পাওয়া উচিত না। আমরা এখন চিন্তা করছি, এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করব। তিনি আরও বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষের ব্যবহারের পানির দাম বাড়বে না, তবে কমানো হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় পানির দাম বাড়বে। ২০১০ সালে ঢাকা শহরের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ বৈধ পানির সংযোগের বাইরে ছিল। এখন ঢাকার প্রায় শতভাগ মানুষ বৈধভাবে পানি পায় বলেও জানান তাকসিম এ খান।

নিম্ন আয়ের এলাকার ‘আদর্শ গ্রাহকদের’ সম্মাননা জানাতে যৌথভাবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা ওয়াসা, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ডিএসকে) এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মূলত ২০১১ সাল থেকে ঢাকার বস্তি এলাকায় বৃহৎ পরিসরে বৈধ পানির সংযোগ দেয়া শুরু হয়। এখন শহরের বিভিন্ন বস্তিতে সাত হাজার ৪৮৩টি বৈধ সংযোগ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এলাকাভিত্তিক পানির দামের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ঢাকায় এক হাজার লিটার পানি ১৪ টাকায়, চট্টগ্রামে ১২ টাকায় সরবরাহ করা হয়। ভারতের দিল্লিতে (মূল শহরে) এক হাজার লিটার পানির দাম নেয়া হয় ৪৩ রুপি, তবে শহরতলিতে পানির দাম কম। কারণ, শহরতলিতে নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের আওতায় আসবে বলেও ঘোষণা দেন হেলালুদ্দীন আহমদ। এছাড়া নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করায় নিম্ন আয়ের মানুষদের তিনি ধন্যবাদ দেন। উচ্চবিত্তরা এ থেকে উৎসাহিত হতে পারেন বলেও তিনি মত দেন।

অনুষ্ঠানে নিম্ন আয়ের এলাকায় (বিশেষ করে বস্তিতে) সাত হাজার ৪৮৩ জন বৈধ গ্রাহকের মধ্যে ২৫ জন গ্রাহককে সম্মাননা দেয়া হয়।

নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বৈধভাবে পানি সরবরাহ সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, ‘নয়াদিল্লিতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ ইনফরমাল সেক্টরে থাকে। সেখানে পানির ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ব্যবস্থাপকদের হাতে নেই। সেটি মাস্তানদের হাতে। একসময় আমাদের কড়াইল বস্তিতেও মাস্তানদের মাধ্যমে পানি দেয়া হতো, আমরা সেটিকে উচ্ছেদ করেছি।’ আগামী বছরের মধ্যে ঢাকার শতভাগ বস্তি বৈধ সংযোগের আওতায় আসবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।

নিম্ন আয়ের মানুষদের বিল পরিশোধের প্রবণতা সম্পর্কে তাকসিম এ খান বলেন, টাকার অভাব নেই এমন গ্রাহকদের কাছে ৭০ লাখ টাকা পানির বিল বকেয়া আছে, অথচ নি¤œ আয়ের মানুষের বকেয়া নেই। যারা সক্ষম, তারা বিল দেন না। যারা সক্ষম নন, তারা সঠিকভাবে পানির ব্যবহার করেন এবং নিয়মিত বিল দেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ডিএসকের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মাহমুদুর রহমান ও নি¤œ আয়ের মানুষের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য সরবরাহ করা পানির দাম কমাতে ঢাকা ওয়াসা প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, এর আগে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাত্র একদিন পরেই পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল ওয়াসা। সংস্থাটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ব্যবহারকারীদের জন্য পানির দাম বাড়িয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে, আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয় ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়িয়ে  ৩৭ দশমিক শূন্য চার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নতুন দাম গেল ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়।