এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বহুল প্রতীক্ষিত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশ যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন। এটি শহরের যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে এক্সপ্রেসওয়ের নামফলক উšে§াচন করেন। পরে দেশ ও জনগণের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কাওলা প্রান্তে টোল পরিশোধ করেন, যেখানে পৌঁছালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে স্বাগত জানান। উদ্বোধন শেষে রঙিন বেলুন উড়িয়ে দেয়া হয়। সূত্র: বাসস।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন।

কাওলা প্রান্তে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বিকালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি নাগরিক সমাবেশে যোগ দিতে শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠের উদ্দেশে রওনা হন।

আজ রোববার বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বোর্ডিংয়ের জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীতে দুটি র‌্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিমি।

থ্রিহুইলার, সাইকেল এবং পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেয়া হবে না। মোটরবাইক এখনই চলতে পারবে না।

এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের টোল হার ৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে।

ক্যাটেগরি ১-এর অধীনে যে কোনো স্থান থেকে বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশ অতিক্রম করার জন্য গাড়ি, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের নিচে) এবং হালকা ট্রাক (তিন টনের নিচে) টোল রেট ৮০ টাকা।

মাঝারি ট্রাকের জন্য (ছয় চাকা পর্যন্ত) যে কোনো পয়েন্ট থেকে রুট পার হওয়ার জন্য টোল রেট ক্যাটেগরি-২-এর অধীনে ৩২০ টাকা।

ক্যাটেগরি-৩-এর অধীনে যে কোনো পয়েন্ট থেকে রুট পার হওয়ার জন্য ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) টোল রেট ৪০০ টাকা। যে কোনো পয়েন্ট থেকে রুট পার হওয়ার জন্য যে কোনো বাসের (১৬ সিটের বা তার বেশি) টোল রেট ক্যাটেগরি-৪-এর অধীনে ১৬০ টাকা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং এইচএসআইএ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে যানবাহনের সময় লাগবে ১০ মিনিট। ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার মেইন লাইন এবং ১১ কিলোমিটার র‌্যাম্পসহ, অংশটির দৈর্ঘ্য হবে ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এই অংশের ১৫টির মধ্যে ১৩টি র‌্যাম্প খোলা হবে। বনানী ও মহাখালীর র‌্যাম্প নির্মাণ শেষ হলেই খুলে দেয়া হবে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, এতে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) তহবিল দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশ সরকার দেবে।

ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড এর বিনিয়োগকারী কোম্পানি। এতে ইতালির থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) শেয়ার ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

প্রকল্প অনুযায়ী, প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এবং পর্যালোচনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৩ সালে ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রকল্প সমাপ্তির সময়কাল ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ জুন।

বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প শুরু হয়েছে। আকার, বাজেট ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলোকে মেগা প্রকল্প বলা হয়েছে। সরকার তাদের কয়েকটিকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন-৬ এবং চন্দ্রা-এলেঙ্গা চার লেন মহাসড়ক সম্পন্ন হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও দীর্ঘতম আন্ডারওয়াটার রোড টানেল, যা শিগগির যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রকল্পÑপদ্মা সেতু রেল সংযোগ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়ে সেতু। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারের মূল ফোকাস এখন এগুলোর কাজ সময়মতো সম্পন্ন করা।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের যোগাযোগ, পরিবহন ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোর রূপান্তরের লক্ষ্যে বেশ কিছু স্মারক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা ঢাকা মেট্রোরেল আংশিক চালু করেছে এবং পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে।