এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের অফিসে ফেরাতে মরিয়া

শেয়ার বিজ ডেস্ক: এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অফিসগুলোয় কর্মীদের চাপ বাড়ছে। কভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটানোর পর কর্মীদের কাজে ফেরাতে তাগাদা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করার তাগিদ অনুভব করছে তারা। এই পরিস্থিতিকে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর: নিক্কেই এশিয়া।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দ–ই বছরের দীর্ঘমেয়াদি ওয়ার্ক ফ্রম হোম কিংবা রিমোট ওয়ার্ক (দূরে থেকে কাজ) বাতিল করতে চাইছে এশিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। পশ্চিমাদের

তুলনায় তারা অফিস খুলে দিচ্ছে এবং পূর্ণকালীন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। তবে অনেক নিয়োগদাতা এখনও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। গবেষণা অনুযায়ী, অনেক কর্মচারী আবার অফিসে যেতে আগ্রহী নন; এ কারণে তারা কর্মস্থল ছেড়ে দিতে চান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক নিয়োগদাতা তাদের অগ্রাধিকার ও কর্মীদের পুনর্মূল্যায়ন করতে চান। পেশাদার পরিষেবা সংস্থা ‘ইওয়াই’-এর অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্সের নেতা সমীর বেদিও একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিয়োগদাতাদের অবশ্যই কর্মীদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে তারা বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। তাদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে খাপ খাইয়ে নেয়া ও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিতে হবে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা ইওয়াইয়ের এক জরিপে অংশ নিয়ে জানিয়েছেন, আগামী ১২ মাসের মধ্যে তারা চাকরি ছাড়তে চান। উচ্চ বেতন, ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া, শ্রমবাজারে টিকে থাকা এবং সুবিধামতো অবস্থানে থেকে চাকরির সুযোগের জন্য কর্মীরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই জরিপে অংশ নিয়েছেন ২২টি দেশের এক হাজার ৫০০ ব্যবসায়িক নির্বাহী ও এক হাজার সাতশ’র বেশি কর্মী।

তবে এশিয়ার অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা জারি করতে চাইছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিবিআরই চলতি বছরের শুরুর দিকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৫০টি সংস্থা নিয়ে এক জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের তুলনায় চলতি বছর কর্মস্থলে ফেরা কিংবা সরাসরি কাজে যোগ দেয়া কর্মীর সংখ্যা ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি আফ্রিকার দেশগুলোয়ও। এসব অঞ্চলের মাত্র পাঁচ শতাংশ কর্মী কর্মস্থলে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিগনা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটসের মানবসম্পদ কর্মকর্তা মিশেল লিউঙ্গ শ্রমবাজারে কভিড মহামারির গভীর প্রভাবকে বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, ২০২১ সাল ছিল পদত্যাগের বছর। একই সঙ্গে গত বছরটি ছিল কর্মীদের কর্মজীবন পুনর্গঠনের সময় এবং তাদের ব্যক্তিগত চাহিদার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত কাজে মনোনিবেশ করার সময়। এই কারণে লিউঙ্গ বলেন, শ্রমবাজারে অসন্তোষ ও অস্থিরতা চলছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই কর্মীদের (নতুন কর্মী) প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং তারা যে ধরনের সুবিধা দেয় তা কতটা কর্মীদের পক্ষে তা বিবেচনায় রাখতে হবে।

সিগনার গবেষণা দেখা গেছে, এশিয়ার প্রবাসী কর্মীরাও শ্রমবাজারের অসন্তোষ ও অস্বস্তি থেকে মুক্ত নয়। জরিপে অংশ নেয়া চীন, জাপান,

সিঙ্গাপুর, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১২ হাজার প্রবাসী কর্মী জানিয়েছেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে তাদের মানসিক ও শারীরিক চাপ বেড়েছে। প্রায় সব উত্তরদাতা একই ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন এবং তারা ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাদার জীবনের পুনর্মূল্যায়ন করতে চান। তারা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আরও সময় কাটাতে চান।

এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত জুনে। এতে দেখা গেছে, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত এশিয়ার কর্মীরা বিদেশে স্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আশাবাদী। এর আগে মে মাসে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেঞ্চার একটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, পাঁচজনের মধ্যে তিনজন কর্মী মনে করেন, তারা সহকর্মী ও নিয়োগদাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নন। এই গবেষণায় অংশ নেন সিঙ্গাপুর, ভারত, চীন ও জাপানের কর্মীরা।