এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আবুল বশর ইউসিবিতে খেলাপি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: কয়েক বছর আগে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের ট্রেডার ছিলেন বিএসএম গ্রুপের চেয়্যারম্যান আবুল বশর চৌধুরী। তিনি এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক। এ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী বেসরকারি ব্যাংক ইউসিবির এক হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছেন। মাসখানিক আগে ন্যাশনাল ব্যাংকে ৪০০ কোটি টাকা খেলাপি হয়। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আরও দুই হাজার কোটি ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

ইউসিবি সূত্রে জানা যায়, বিএসএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রুবি ফুড প্রোডাক্টের নামে ইউসিবি খাতুনগঞ্জ থেকে ঋণ নেয়। প্রথমদিকে নিয়মিত ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করলেও গত এক বছরের অধিক সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করছে না। বর্তমানে রুবি ফুডের কাছে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৩৭৯ টাকা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এ ঋণ আদায়ে ব্যাংক বারবার চেষ্টা করলেও ঋণ পরিশোধের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আর এ ঋণ পরিশোধে একাধিক চেক দিলেও হিসাবে টাকা না থাকায় বারবার চেক প্রত্যাখ্যান হয়। এ নিয়ে একাধিক চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেছে ব্যাংক। এখন খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখা ঋণের বিপরীতে কর্ণফুলী থানার ডাংগারচরের ছয় একরের একটু বেশি জমি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে। এ নিলাম আগামী ১০ মার্চ সংশ্লিষ্ট শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। আর নিলামে কাউকে পাওয়া না গেলে অর্থঋণ আদালতে মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাংকটি।

অপরদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বিএসএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং রুবি ফুডের নামে ন্যাশনাল ব্যাংক খাতুনগঞ্জ থেকে নেয়া প্রায় ৪০০ কোটি টাকাও বেশি খেলাপি। এ ঋণ আদায়ে ডিসেম্বর মাসে খাতুনগঞ্জের বিএসএম সেন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ আবুল বশর চৌধুরী খাতুনগঞ্জে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি দেশের ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় বড় আমদানিকারক বর্তমানে বছরে তার প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ (সাবেক মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স) লেনদেন হয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এ গ্রুপের চাল, ডাল, তেল, পাওয়ার, পলি, হ্যাচারি, জুট মিলস, টেক্সটাইল মিল, আবাসানসহ মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান আছে।

এ গ্রুপের সাথে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক প্রভৃতি ব্যাংৃকর লেনদেন আছে। এসব ব্যাংকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ আছে। এ বিষয়ে আবুল বশর চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ইউসিবিতে আমার ঋণ আছে। তবে যত টাকা খেলাপি আছে বলা হয়েছে, তত টাকা খেলাপি নেই। সঠিক ঋণের পরিমাণ আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমি ঋণ রি-শিডিউল করার জন্য চেষ্টা করছি। আমার এখন তেমন ভোগ্যপণ্য আমদানি নেই।’ তবে তিনি বিপুল পরিমাণে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে কোনো পরিকল্পনা বলতে পারেননি। এ বিষয়ে ইউসিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, তিনি এখন আমাদের ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি। এ বিষয়ে জানার জন্য ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামদুদুর রশিদের ব্যবহƒত মোবাইল ফোন নাম্বারের যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবুল বশর চৌধুরী এবং তার আপন দুই ভাই মিলে মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মডার্ন পাইভার লিমিটেড, রুবি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড, মডার্ন হ্যাচারি লিমিটেড, বিসমিল্লাহ ফেব্রিক্স লিমিটেড, মুকবুল রহমান জুট মিল লিমিটেড, বি কে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে বিএসএম গ্রুপ।