এসএমইদের বিনিয়োগ পেতে ভূমিকা রাখবে আইএফআরএস

নিজস্ব প্রতিবেদক: এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে ভুল-ভ্রান্তি হ্রাস করতে ভূমিকা পালন করবে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস)। পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ পেতেও ভূমিকা পালন করবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ‘এসএমইদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। এতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমির উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে ভুল-ভ্রান্তি হ্রাস এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস)। তিনি বলেন, ‘আমাদের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি এবং আইএফআরএস এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করবে। যার মাধ্যমে এ খাতের উদ্যোক্তাদের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনয়নের পাশাপাশি এসএমইদের অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণে সহায়তা করবে।’
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আইএফআরএসের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের কমপ্লায়েন্স বাড়বে, সেই সঙ্গে এ খাতের উদ্যোক্তাদের অধিক হারে করজালের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে কর আহরণের হার বৃদ্ধি করবে। সর্বোপরি আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে আরও অধিক হারে প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায়ে রেখে এসএমইদের জন্য আইএফআরএস গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের সকল এসএমইদের ক্ষেত্রে এটির বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আইএফআরএস বাস্তবায়নে এসএমইদের আগ্রহী করে তুলতে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। আমির উদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আইএফআরএস বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। তবে এটি বস্তবায়নে বিশেষ করে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান একান্ত আবশ্যক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশে পরিচালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউন্ট্যান্টস) না থাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবরক্ষণে নানা প্রতিবন্ধকার মুখোমখি হতে হয়। তবে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে এবং উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে এফআরসিএস বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হওয়ার ওপর তিনি জোরারোপ করেন। বর্তমানে ৮০টি দেশে এফআরসিএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার প্রদান করা হলেও দক্ষতা এবং আগ্রহের অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয়নি। এফআরসিএসের অধিকতর বাস্তবায়নে তিনি সহজীকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ম্যানেজিং পার্টনার এসকে মো. তারিকুল ইসলাম।
মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই’র আহ্বায়ক লুৎফুল হাদী বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ২ হাজার ২০০ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, যার মধ্যে প্রায় ৬০০ জন এ কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করে প্রায় ৪০ হাজার প্রফেশনাল এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তবে এ খাতে আরও অ্যাকাউন্টিং প্রফেশনালের প্রয়োজন রয়েছে। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।