ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রোধে জরুরি পদক্ষেপ কাম্য

নভেল করোনাভাইরাসের বর্তমান নাম সেভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২ (সার্স-কভ-২)। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে এ ভাইরাস। এটির নাম নির্ণয় করা হয় গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে। এর নামকরণ করছেন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা। গ্রিক বর্ণমালার সংখ্যা ২৪ হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ সংখ্যাও ছাড়িয়ে যাবে সার্স-কভ-২। সে ক্ষেত্রেও গ্রিক বর্ণমালার সঙ্গে ১, ২ যোগ করে নতুন ভাইরাসের নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন তারা।

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের ধারণা, করোনা বা সার্স কোনো ভাইরাস আর কাবু করতে পারবে না তাদের। ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’কে তো পাত্তাই দিচ্ছেন না তারা। কোনো সচেতনতাও দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না সব ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৫টি নির্দেশনা দিলেও কোনো বাস্তবায়ন নেই। খোদ মন্ত্রণালয়েরই ঢিলেঢালা ভাব।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদকের শিরোনাম ছিল, ‘ওমিক্রন নিয়ে প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের’ যথার্থ বলেই প্রতীয়মান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দরজায় কড়া নাড়ছে ওমিক্রন। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, দেশে লকডাউন ও সীমান্ত বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি।

অধিদপ্তর ও মন্ত্রীর বক্তব্যে অসঙ্গতি সাধারণ মানুষকে দোটানায় ফেলে দেবে বলেই আমরা মনে করি। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়। বিভিন্ন রূপ ধারণ করলেও সার্সের লক্ষণ, প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সবাই জানেন। সচেতন হতে হলে ভয় করতে হবেÑএমন কোনো কথা নেই।

আত্মতুষ্টিরও রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। এমনকি টিকা, বুস্টার ডোজ নিলেও।

সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত ২৪০ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। তাদের মাধ্যমে সার্সের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। তাই সর্বাত্মক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে ওমিক্রন হোক বা অন্য কোনো ধরন হোক, তা আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।

উপসর্গের নি¤œবর্ণিত তালিকা সম্পূর্ণ নয়। তবুও উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখতে হবে নতুন ধরনের নুতন উপসর্গ দেখা দেয়। বর্তমান উপসর্গগুলো হলো, শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে সমস্যা, কথা বলতে বা চলাচলে সমস্যা অথবা বিভ্রম, বুকে ব্যথা, জ্বর, কাশি, ক্লান্তি, স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি হারানো, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, ডায়রিয়া, ত্বকে র‌্যাশ অথবা হাত-পায়ের আঙুল বর্ণহীন হওয়া, চোখ লাল হওয়া বা খচখচ করা প্রভৃতি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। যেমন সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা, প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা প্রভৃতি। একটি বিষয় সর্বদা মনে রাখতে হবে, সার্সের অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বাত্মক লকডাউন আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তিগত সুরক্ষায় আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে গেলে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া নিশ্চিত করলে সার্সের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ‘মাস্ক নেই, সেবা নেই’ কর্মসূচি পরিপালনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমভাবে সক্রিয় হতে হবে।