Print Date & Time : 5 August 2025 Tuesday 2:23 am

ওয়াসার হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক

রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসার পানিকে আগের চেয়ে ‘অনেক ভালো’ দাবি করলেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ওয়াসার পানি পান করেন না। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি ট্যাপ থেকে নিয়ে খাওয়া যাবেÑএমন ঘোষণা ২০২১ সালেই হয়তো দেয়া যাবে, এমন কথাও বলেছেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকায় এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করছে ওয়াসা। সেটি হলে পানির দরে পানি পাবে না উচ্চবিত্তরা। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষকে পানির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি দিতে হবে, কম টাকায় পানি পাবেন নি¤œ আয়ের মানুষ। ওয়াসার এমন সিদ্ধান্তকেও নগরবাসী স্বাগত জানাবেন।

ওয়াসার কাজে কিছু বৈপরীত্যে সাধারণ মানুষ হতাশই হবেন। পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এশিয়ার পাবলিক সেক্টরে সর্বোত্তম পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হওয়া ওয়াসার লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সব সেবা ও কার্যক্রমে উচ্চমানের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং সব কর্মকাণ্ডে দক্ষতা বাড়ানো ও পরিচালন ব্যয় কমানো ওয়াসার মিশন। লক্ষ্য অর্জনের ধরনে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আত্মতৃপ্ত কি না, আমরা জানি না। তবে নগরবাসী হতাশ হবেন। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘পানির দাম বৃদ্ধির পরও বড় লোকসানে ঢাকা ওয়াসা’ শীর্ষক প্রতিবেদন সংস্থাটির ব্যর্থতা  কিংবা দুর্নীতিকেই সামনে এনেছে।

কোনো গণশুনানি না করেই দফায় দফায় পানির দাম বাড়িয়েছে ওয়াসা। রাজধানীর প্রায় সব বস্তি বৈধ সরবরাহের আওতায় এসেছে। তাই বিল অনাদায়ী থাকার কথা নয়। পানির যা উৎপাদন খরচ, তার চেয়ে অনেক কম দামে পানি দেয়া হয়। বাকিটা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। পানির দাম বৃদ্ধি, সবাই বৈধ সরবরাহের আওতায় আসায় ওয়াসা মুনাফা করে আসছে। এখন হঠাৎ এমন কী ঘটল যে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা ছয় বছর মুনাফা করে এলেও গত অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লোকসান হয়। ওয়াসায় কোনোভাবেই লোকসান হওয়ার কথা নয়। এটি কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। গত অক্টোবরে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে ওয়াসায় শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু নিজস্ব লোকবল দিয়ে এ-সংক্রান্ত কমিটির নিরপেক্ষভাবে কাজ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ কমিটিতে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করলে সুফল মিলতে পারে।

বলা হচ্ছে, বর্তমানে পানির দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় কম বলে লোকসান হচ্ছে। কিন্তু ব্যয় বৃদ্ধির কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে পানির দাম যেন বাড়ানো না হয়। ওয়াসাকে লাভজনক করতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি কঠোরভাবে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হলে ওয়াসা মুনাফার ধারায় আসতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি।