Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 11:39 pm

ওষুধের কাঁচামাল আমদানি সহজীকরণের উদ্যোগ নিন

ওষুধ আমাদের এক সম্ভাবনাময় শিল্প। এ খাতে সাফল্যও বিস্ময়কর। কভিড মহামারির অভিঘাতে যখন দেশের বেশিরভাগ শিল্পের আয় ব্যাপক কমেছে, তখন বিপরীত চিত্র ছিল ওষুধ শিল্প খাতে। প্রকৃত ও সরকারিভাবে তথ্য প্রকাশ করা না হলেও এ খাতের উদ্যোক্তাদের তথ্যমতে, ওই সময় দেশের ওষুধের বাজারে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতি বছর দেশীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে ওষুধ রপ্তানি হয় বিশ্বের প্রায় ১৬০ দেশে। রপ্তানি-আয় প্রতি বছরই বাড়ছে, জীবনরক্ষাকারী ওষুধও তৈরি হচ্ছে দেশে।

কভিডকালে স্বাস্থ্যসেবা খাতের কিছু অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দেশে-বিদেশে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ করলেও ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি কেউ। বরং আমাদের কতগুলো ওষুধ ‘নিরাপদ ও কার্যকর’ বলে স্বীকৃতি ও ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), যুক্তরাজ্যের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ), ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি), গুডস থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (টিজিএ অস্ট্রেলিয়া) উন্নত দেশগুলোর ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এত সাফল্য ও অর্জনের মধ্যে গতকাল শেয়ার বিজ কড়চায় ‘ডলার সংকটের খড়্গ’ শীর্ষক প্রতিবেদন ওষুধ শিল্পে অনিশ্চয়তাকেই সামনে এনেছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, ওষুধের কাঁচামাল বেশিরভাগই আমদানি করে আনতে হয়। বর্তমানে পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণে ওষুধের কাঁচামাল বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের এপিআই আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধের উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই দেশের বাজারেই জরুরি অনেক ওষুধের সরবরাহ সংকট দেখা দেবে। রপ্তানিও বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা এ শিল্পসংশ্লিষ্টদের।

দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলদের উত্তরণে বিশ্ববাণিজ্যে জিএসপি, ছাড়সহ কিছু সুবিধা প্রত্যাহƒত হবে; তখন প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অন্যতম পণ্য হওয়ার কথা ওষুধ শিল্প। সে জন্য ওষুধের বিশ্ববাজার ধরতে বড় উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বৈশ্বিক ওষুধ বাজারে আমাদের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে এ খাতের প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী ৩০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ওষুধ বাজারে নিজ অবস্থান পোক্ত করতে এখন থেকেই বড় উদ্যোগ নিতে হবে।

ওষুধের রপ্তানি বাজার প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারের। এর ৫ শতাংশও অর্জন সম্ভব হলে রপ্তানি আয় হবে ১০ বিলিয়ন ডলার। ডলার সংকট নিরসন, কাঁচামাল আমদানি, কর অবকাশসহ দরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে, ওষুধের সুনাম ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে কম সময়ের মধ্যেই এ বাজার ধরা সম্ভব। অবশ্য কাঁচামাল আমদানির ফলে দেশে তৈরি ওষুধের দাম তুলনামূলক বেড়ে যায়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্ক পুরোদমে উৎপাদন শুরু করলে ওষুধ শিল্পে কাঁচামালের চাহিদার সিংহভাগই জোগান দেয়া সম্ভব হবে। এ ধারায় বাণিজ্যিক উৎপাদন পুরো শুরু হলে ওষুধের দামও কমবে। অপেক্ষাকৃত কম দামে রপ্তানি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে ওষুধ রপ্তানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, দুর্যোগকালে ওষুধসামগ্রী দিয়ে বন্ধুদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং দেশবাসীর জন্য কমদামে মানসম্পন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারব।