কক্সবাজার রেলস্টেশনে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন আসবে আজ

এসএম রুবেল, কক্সবাজার: বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন আসবে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায়। সেই ট্রেনকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে বসে আছে পুরো কক্সবাজারবাসী। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই রেলপথ যুক্ত হওয়ার পর বহু সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে এই সমুদ্র নগরীতে। আর নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে স্থানীয়দের।

গতকাল বৃহস্পতিবার রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে মনেই হচ্ছে না কালকের পর থেকে এখানে নিয়মিত ট্রেন আসবে, ট্রেন যাবে। স্টেশনের প্রবেশমুখে কোনো ফটক বা সাইনবোর্ডে স্টেশনের নাম নেই। স্টেশনের প্রবেশমুখ আটকানো আছে। পাশেই নিরাপত্তা কর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন, কাউকে ভেতরে যেতে দিচ্ছেন না। তারপরও উৎসুক কিছু মানুষ স্টেশন এলাকায় প্রবেশ করে স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি ওঠাচ্ছেন। দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, সর্বসাধারণের জন্য স্টেশনে প্রবেশ নিষেধ আছে। শুধু টিকিটের জন্য যাত্রীরা প্রবেশ করতে পারবে।

স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে নির্মাণকাজ চলার দৃশ্য। ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। মূল ভবনের হাতের ডান পাশে স্থাপিত পার্কিং এরিয়াতেও বেশ কিছু শ্রমিক কাজ করছে। অপরদিকে স্টেশনের মূল প্রবেশদ্বার ব্লক করা আছে। সেখানেও নির্মাণকাজ করছে শ্রমিকরা। মূল প্রবেশদ্বারের ডান পাশেই ভিআইপি টিকিট কাউন্টার। সেটি খোলা রাখা হয়েছে টিকিট বিক্রির জন্য। এই অংশ ছাড়া মূল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে ভবনের ভিতর থেকে নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতির শব্দ শোনা যায়।

টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত রেলওয়ে কর্মকর্তা জানান, ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট শেষ হয়েছে। তবে ২ ডিসেম্বরের কয়েকটি এসি টিকিট এখনও খালি আছে। টিকিট কাটতে এসে নির্দিষ্ট দিনের টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক পর্যটক।

এদিকে মূল ভবনের পেছনে চলছে নির্মাণকাজের বৃহৎ অংশ। সেখানেও রয়েছে নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থান। ১নং প্ল্যাটফর্মের বেশিরভাগ অংশের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ২ ও ৩নং প্ল্যাটফর্মের কাজ চলমান আছে। ভবনের পেছনের অংশে রং দিয়ে সাজানোর কাজও করা হচ্ছে। এছাড়া এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার ওভারব্রিজের নির্মাণকাজও বাকি রয়েছে। চালু হয়নি লিফ্ট সেবাও। পুরো প্ল্যাটফর্মের নানা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। ৩নং প্ল্যাটফর্মে এখনও রেলের পাটাতন বসানোর কাজ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার রেলস্টেশনের প্রধান আকর্ষণ মূল ভবনের সামনে স্থাপিত হয়েছে ঝিনুকের আইকন, চারপাশে পানি আর মধ্যখানে ঝিনুক। এটি দেখতেই ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। তবে সেখানে প্রবেশে জনসাধারণকে বাধা দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ঝিনুকের সঙ্গে ছবি তুলতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

ঢাকা থেকে আগত মিজবাহ উদ্দীন ও আহসান হাবিবের সঙ্গে কথা হয় স্টেশনে। তারা জানান, আগামীকাল ট্রেন আসবে শুনে তারা স্টেশন দেখতে এসেছেন। কিন্তু স্টেশনে ঢুকতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তাকর্মীরা। এছাড়া ঝিনুকের সামনে যেতে দিচ্ছেন না।

স্থানীয় মিজবাহ, রফিক, সুমনসহ কয়েকজন জানান, স্টেশনের সৌন্দর্য দেখতে এসেছিলেন তারা। কিন্তু সংরক্ষিত এরিয়া হওয়ায় নানা জায়গা দেখতে পারেননি। উম্মুক্ত করা হলে দেখবেন, সেই আশা নিয়ে ফিরে যান তারা।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ম্যাক্স গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মুহাম্মদ ইয়াকুব জানান, একটি টিকিট কাউন্টার ও পার্কিংয়ের অল্প জায়গা ছাড়া অন্যসব এলাকায় জনসাধারণকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঝুঁকি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। কখন স্টেশন সবার জন্য উম্মুক্ত করা হবে সেই প্রশ্নের জবাবের ম্যাক্স গ্রুপের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, নির্মাণকাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হতে আরও ছয় মাস মতো লাগতে পারে। তারপর জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করা হতে পারে।