‘ঢাকা-সিলেট রেলপথ: চীনের ঋণে হবে ব্যয়বহুল ডুয়েলগেজ রূপান্তর প্রকল্প’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা স্বাভাবিক কারণেই উদ্বেগজনক। কোনো ঋণ গুণগত মানসম্পন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে ব্যবহার করা হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়বে, সরকারের ঋণ পরিশোধ সক্ষমতাও বাড়বে, এটি ঠিক। কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কঠিন শর্তের ঋণ ব্যবহার করা হলে, ঋণের বোঝাই বাড়বে। চীনের ঋণ আমাদের সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়।
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ ও চীন। এর আওতায় ৩৪ প্রকল্পে ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন (দুই হাজার ৪৪৫ কোটি) ডলার ঋণ দেওয়ার কথা চীনের। এ ঋণ ব্যবহার হবে ঢাকা-সিলেট চার লেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে। জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রদেয় এ ঋণের শর্ত হলো কোনো দরপত্র ছাড়াই প্রকল্পে একমাত্র দেশটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই কাজ করতে পারবে। চীনেরও একাধিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ পাবে, এমন সুযোগ রাখা হয় না। ফলে প্রকল্পের কাজ মানসম্পন্ন নাও হতে পারে।
চীনের বিপুল পরিমাণ ঋণ শোধ করতে না পেরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে হাম্বানটোটার মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ৯৯ বছরের জন্য দেশটির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এটা ছিল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে তাদের এক বড় অধিগ্রহণ। বিআরআই প্রকল্পের আওতায় চীনের দেওয়া বড় অঙ্কের ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট প্রকল্পের ঘোষণা দেন। ৬৮টি দেশকে এ প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন তিনি। পাঁচ লাখ কোটি ডলার ব্যয়ের উচ্চাভিলাষী এ প্রকল্পে চীন একাই ৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। এ প্রকল্পে পাকিস্তানের পূর্ববর্তী সরকারের অংশগ্রহণ নিয়ে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শঙ্কিত।
চীনের বিনিয়োগ জালে ফেঁসেছে মন্টিনেগ্রো। একপর্যায়ে জনকল্যাণমূলক ব্যয় হ্রাস, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কর্তন এবং সিগারেট, অ্যালকোহল ও কয়লার ওপর কর বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয় দেশটি। চীনের ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও মালদ্বীপের সরকারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে চীনের সিল্ক রোড প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসেছে মালয়েশিয়া সরকার।
চীন আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। দেশটি আমাদের ঋণজালে আটকাবে বলে আমরা মনে করি না, কিন্তু সব ঋণের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। কেউ যেন ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকায় গছিয়ে না দেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চুক্তির বিষয়ে শৈথিল্য হলে ঋণের বোঝা চাপবে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য আলাদা কারিগরি কমিটি গঠন এবং কমিটির মূল্যায়নের ভিত্তিতে চুক্তি করা উচিত।
