Print Date & Time : 1 August 2025 Friday 4:03 am

কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপে ডিসিসিআই’র উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকার সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে অবরুদ্ধ বা লকডাউন ঘোষণা করেছে; যা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার যদিও সমুদ্র বন্দরগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তবুও অন্যান্য সেবাখাত অনেকাংশেই বন্ধ বা সীমিত থাকায় পণ্য বা কন্টেইনার খালাসে অনীচ্ছাকৃত দীর্ঘসূত্রিতা হয়ে যাচ্ছে।

## ভারত, নিউজিল্যান্ডের শিপিং কোম্পানিগুলো এ ক্রান্তিলগ্নে চার্জ মওকুফ করেছে

এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে পারছে না। তার উপর লকডাউন চলা অবস্থায় কিছু বিদেশি শিপিং কোম্পানি বা এজেন্ট তৃতীয় পক্ষ আমদানিকারকদের উপর তাদের মর্জিমত অতিরিক্ত কন্টেইনার ডিটেনশন বা ডেমারেজ চার্জ আরোপ করছে।

কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার দরুন শিপিং কোম্পানিগুলো বা এজেন্ট বা তাদের মনোনীত ফ্রেইট ফরওয়ার্ডরা এ অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করতে পারছে। শিপিং কোম্পানি অথবা তাদের মনোনীত এজেন্ট কর্তৃক অনিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার ডিটেনশন বা ডেমারেজ চার্জ আরোপের ফলে আমদানিকৃত উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আমাদের বিশ্ববাজারে রপ্তানি সক্ষমতাকে হ্রাস করছে। স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য আমদানি করা পণ্যের মূল্যও এতে করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর গত ২৯ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে শিপিং লাইনসগুলোকে বা তাদের মনোনীত এজেন্টদের আমদানিকারকদের উপর লকডাউন চলাকালে কোন প্রকার ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সত্ত্বেও শিপিং কোম্পানিগুলো কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ অব্যাহত রেখেছে; যা এ কঠিন সময়ে আমদানিকারকদের উপর বাড়তি বোঝা হিসেবে নিপতিত হচ্ছে।

লকডাউন চলাকালীন সময়ে শিপিং লাইনস বা এজেন্টসমূহের কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করা উচিত এবং নতুন করে বা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। ‘পোর্ট অর্ডিনেন্স ১৯৭৬’ মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

এবং বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে যদি কোন কোন শিপিং লাইনস বা এজেন্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন বিধিমালা বর্হিভূত কাজ করে তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা থাকা উচিত, যাতে করে আমাদানি রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণের সময় যৌক্তিক ও যথোপযুক্ত হারে কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ নির্ধারিত হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০০৬ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যে লাইসেন্স আইনের অধীন শিপিং লাইনের এজেন্টসমূহ বা ফ্রেইট ফরওয়ার্ডরা পরিচালিত হয়ে থাকে সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, এজেন্টসমূহ বা ফ্রেইট ফরওয়ারডার্সদের রাষ্ট্র প্রণীত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রণীত আইন, নীতিমালা, বিধিসমূহ, নির্দেশনা, বিজ্ঞপ্তি বা নোটিশ মেনে চলতে হবে।

অন্যথায় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস/ শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। যেহেতু এজেন্টসমূহ/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডসরা মূল শিপিং লাইনস এর হয়েই কাজ করে তাই মূল শিপিং লাইনসগুলোকেও এই নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।

এরুপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে যে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহকে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে যেন লকডাউন চলাকালীন সময়ে সংগৃহীত কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ শিপিং লাইনস এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আউটওয়ার্ড রেমিটেন্স হিসেবে বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ না করা হয়।

তাছাড়া সর্বোচ্চ কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ কত হতে পারে তার একটি সুনির্দিষ্ট সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কেননা মাঝে মধ্যে দেখা যায়, কনসাইনমেন্ট বা চালানের মোট মূল্যের চেয়ে ক্রমবর্ধিত ডেমারেজ চার্জ বেশি নির্ধারিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিনেন্স, ১৯৮৩ এর ৭৬ অনুচ্ছেদ পুণ:বহাল করা যেতে পারে। যার ফলে আমদানিকারকদের উপর তাদের পূর্বানুমোদন ছাড়া শিপিং লাইনসগুলো তাদের মর্জিমত ডেমারেজ চার্জ আরোপ করতে পারবে না।

আমরা যদি অন্যান্য দেশের উদাহরণ দেখি তাহলে দেখা যায় যে, ভারত ও নিউজিল্যান্ড তাদের শিপিং লাইনসগুলোকে ইতোমধ্যে লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় পক্ষ আমদানিকারদের উপর ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করতে অনুরোধ জানায়। ভারতের ও নিউজিল্যান্ডের শিপিং লাইনসগুলো তাদের রাষ্ট্র প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে আমদানিকারকদের চার্জ মওকুফ করে পত্র প্রদান করেছে।

বেসরকারি আভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো বা অফ-ডক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে লকডাউন চলাকালীন সময়ে খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ও রপ্তানি পণ্য কন্টেইনারে লোডিং চার্জ মওকুফ করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। ব্যবসা- বাণিজ্যের এ ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন বন্দর সম্পর্কিত চার্জসমূহ যেমন ক্রেন চার্জ, লোডিং, আনলোডিং চার্জ, কন্টেইনার ডিসচার্জিং চার্জ কমানোর আহ্বান জানানো যাচ্ছে।