Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 8:51 pm

কবুতরপ্রেমী গোলাম মোস্তফা

কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড় এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন কবুতরের খামার। নিতান্ত শখের বশে গড়ে তোলা এই খামারে রয়েছে ১০৫ প্রজাতির প্রায় ৭০০ কবুতর। এসব দুর্লভ প্রজাতির কবুতরের একেক জোড়ার দাম পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা।
পেশায় হস্তশিল্পসামগ্রী ব্যবসায়ী মোস্তফার অবসর সময় কাটে কবুতর লালনপালন করে। গোলাম মোস্তফা জানান, ছোটবেলা থেকে তার কবুতর পোষার স্বপ্ন ছিল। ১৯৭৬ সালে কুষ্টিয়া শহরের বাস টার্মিনালের কাছে ভাড়া বাসায় তিনি ১২ জোড়া কবুতর এনে সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেন। তবে ভাড়া বাসায় তেমন জায়গা না থাকায় স্বল্প পরিসরে চলছিল কবুতর পালন। পরে শহরের কাস্টম মোড়ে নিজস্ব বাড়ি তৈরির পর ছাদের ওপর ঢেউটিনের ছাউনি দিয়ে প্রায় ২০ বছর আগে তিনি গড়ে তোলেন কবুতর খামার। সেই খামারে সরু রড দিয়ে তৈরি অনেক খোপে এখন নানা জাতের নানা বর্ণের শত শত কবুতরের বাস। অনেক খোপে সদ্যতোলা বাচ্চা, আবার কোনো কোনো কবুতর ডিমে তা দিচ্ছে।
মোস্তফা বলেন, তার খামারে বেনারশ, চুইথাল, কাগচি, গলাকষা, সবুজগলা, খাঁকিগলা, খইয়ে, শাহানপুরী, কালদোম, মুসলদোম, সবুজছায়াসহ দুষ্প্রাপ্য কবুতর রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়া তিনি ভারত ও পাকিস্তান থেকে এসব কবুতর সংগ্রহ করেছেন। কখনও বিনিময় পদ্ধতিতে তার সংগ্রহশালা বাড়িয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তার এই খামার কোনো বাণিজ্যিক খামার নয়। এখান থেকে তিনি কোনো রোজগারের আশাও করেন না। এটা নিতান্তই তার শখের খামার। তবে তার মতে, কেউ চাইলেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এমন কবুতরের খামার করতে পারেন। এর মাধ্যমে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তার খামারের সবুজছায়া কবুতরের বর্তমান বাজারমূল্য ২৫ হাজার টাকা। আর একজোড়া খাঁকিগলা কবুতরের দাম প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তবে কবুতরের ওড়ার ক্ষমতার ওপর এর দাম নির্ধারণ করা হয় বলে জানান এ খামারি। এই কবুতরদের খাবারের জন্য গড়ে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। খামারের পাশের ঘরে থরে থরে সাজানো রয়েছে গম, ভুট্টা, ধান, গম ও ভুট্টার ছাল, সরিষা, ডিমের খোসা, ইটের সুরকি, চুনসহ নানা জাতের খাবার। এছাড়া কবুতররা সবুজ শাকসবজি খেতেও ভালোবাসে। এ কারণে মোস্তফা খামারের পাশে ছাদে নানা জাতের গাছপালা ও শাকসবজি চাষ করেছেন। কবুতররা ইচ্ছামতো উড়ে এসব গাছের পাতা খায়।
গোলাম মোস্তফা জানান, কবুতরের খুব বেশি রোগবালাই না হলেও শীতকালে কিছু রোগ দেখা দেয়। এ সময় তিনি স্থানীয় প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকের পরামর্শমতো কবুতরদের ক্যালশিয়াম ট্যাবলেট ও ভিটামিন এ ও ডি-জাতীয় ওষুধ পানিতে মিশিয়ে খাইয়ে দেন। তিনি জানান, মাঝেমধ্যে তিনি সব কবুতর খোপ থেকে বের করে উড়িয়ে দেন। ৭০০ কবুতর যখন একসঙ্গে আকাশে ওড়ে, কেউ কেউ ডিগবাজি দেয়Ñতখন তিনি কবুতর পোষার সার্থকতা খুঁজে পান। দৃষ্টিনন্দন এ দৃশ্য দেখে তার প্রাণ ভরে যায়। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় উঠে তিনি কবুতর পরিচর্যায় হাত দেন, আর চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত।
স্ত্রী রেহেনা পারভিন পারুল ও নাতনি হুমাইরা ফারজানা ছোঁয়া তাকে নানাভাবে সাহায্য করে। তিনি বলেন, এ দুজন না থাকলে তিনি একা এই খামার সামলাতে পারতেন না। রেহেনা পারভিন জানান, খামারের কবুতরদের মোস্তফা নিজ সন্তানের মতো করে লালনপালন করেন। অনেক খামারি মাংসের জন্য কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করলেও তার স্বামী কোনোদিন এমন কাজ করেন না। এই খামার তার ধ্যান-জ্ঞান এবং অবসরের পুরোটা সময় তার স্বামী এই খামারের কাজে ব্যয় করেন।

কুদরতে খোদা সবুজ