পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল

কবে চালু হবে ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি!

প্রতিনিধি, পঞ্চগড় : প্রায় ১০ লাখ জনগোষ্ঠীর উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এ জেলার পাঁচটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও বড় ধরনের কোনো অসুস্থতায় চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ১০০ শয্যার জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ হাসপাতালটিতে রয়েছে শয্যা ও চিকিৎসক সংকট।  হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য নির্মিত নতুন ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এখনও হস্তান্তর করা হয়নি।

জানা যায়, হাসপাতালের শয্যা সংকট নিরসনে ১০০ শয্যা থেকে ১৫০ শয্যা বাড়িয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের আওতায় প্রায় ৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যার নতুন ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হলেও সাত বছরেও হস্তান্তর করা হয়নি ১০ তলা ফাউন্ডেশনের নতুন ভবনটি। তবে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করা ভবনটির প্রায় সব কাজই শেষ হয়েছে।

এছাড়া হাসপাতালে ৩৬ জনের মধ্যে ১২ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। উপজেলাগুলো থেকে প্রতিদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে ছুটে আসেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা। এসেই পড়েন শয্যা সংকটে। এর মধ্যে চিকিৎসক সংকটের কারণেও প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ রোগীদের।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত এ হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। আর আন্তঃবিভাগে ২০০-২৫০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। অনেক সময় এরও বেশি রোগী ভর্তি হয়ে থাকে। হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যা হওয়ার কারণে অধিকাংশ সময় শতাধিকের বেশি রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নেয়। এতে করে চিকিৎসকদেরও রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

১০০ শয্যার হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৩০টি ও দুটি ওয়ার্ডে পুরুষদের জন্য ৬০টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও প্রতিদিন শয্যার চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঈদের পর থেকে সব ওয়ার্ড ও বারান্দায় মিলে ২০০ রোগী ভর্তি আছেন। পরিসংখ্যান হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, ঈদের দিন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগীসহ ২০৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জগদল এলাকার রোগী রাহেনা বেগম ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলে বেডের অভাবে বারান্দার মেঝেতে জায়গা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো বেড পাইনি। বারান্দার ফ্লোরে বিছানা করে দেয়া হয়েছে।

একই কথা বলেন পেটের ব্যথা আক্রান্ত ছেলে সিয়ামকে নিয়ে আসা শাবানা আক্তার। এছাড়া জেলা শহরের ডোকরো পাড়ার জুয়েল, মিনা বেগম, জবেদা বেগম বলেন, হাসপাতালে বেডের অভাব। তাই আমার স্বজনকে বারান্দার ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের বেড সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় হাসপাতালের মূল ভবন নির্মাণের কাজ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ হলেও ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। ভবনটি নির্মাণ করছে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মূল ভবন তৈরি করেছে ঢাকার মার্ক বিল্ডার্স লিমিটেড, বহির্বিদ্যুৎসংযোগ স্থাপনের কাজ করেছে রংপুরের সৈয়দ সাজ্জাদ আলী এন্টারপ্রাইজ, মেডিকেল গ্যাস স্থাপনের কাজ করেছে ঢাকার স্পেকট্রা লিমিটেড, সার্ভিস বিল্ডিং নির্মাণের কাজ করেছে পঞ্চগড়ের শেখ ট্রেডার্স ও লিফট স্থাপনের কাজ করেছে ঢাকার সুপারস্টার লিমিটেড। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, পানি সরবরাহ, মেডিকেল গ্যাস, লিফট ও সার্ভিস বিল্ডিংসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় হাসপাতাল ভবনটি সময়মতো হস্তান্তর না হওয়ার কারণ জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, ‘২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনও হস্তান্তর করেননি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ। আশা করছি, অতি শিগগিরই হস্তান্তর করবে। হস্তান্তর হলে হাসপাতালে ২৫০ শয্যার জন্য জনবল, চিকিৎসার সরঞ্জামাদিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজন হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এতে রোগীদের শয্যা সংকটসহ সার্বিক সমস্যা দূর হবে।’

পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নবনির্মিত ১০ তলা ফাউন্ডেশনের ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। ভবনটি হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। বিশেষ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভবন বুঝে নিতে চিঠিও দেয়া হয়েছিল। পরে তারা একটি মনিটরিং কমিটি করে পর্যবেক্ষণ করাসহ কিছু কাজের চাহিদা দিলে তা সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’