Print Date & Time : 11 August 2025 Monday 10:04 pm

কভিডকালীন সহায়তার আওতা বাড়ানো হোক

কভিডকালে দরিদ্র মানুষকে সহায়তার সরকারি উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে জড়িতদের দায়িত্বহীনতায় এর সুফল পাচ্ছে না হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। সহায়তা বণ্টনে স্বচ্ছতার অভাব, ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতির কারণে এটি সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হচ্ছে।

গতকাল শেয়ার বিজে ‘দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ: লকডাউনে এ বছর স্তিমিত ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি খাতেও উল্লেখযোগ্য কোনো ত্রাণ কার্যক্রম নেই। ভারতে ২৬ হাজার কোটি রুপির ত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

কভিড মহামারি চলে যায়নি। বরং নতুনভাবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে দেশে দেশে ভীতি ছড়াছে। পরিস্থিতি সামালে কঠোর লকডাউন দিতে বাধ্য হলেও ওইসব দেশ নাগরিকদের বিভিন্ন সুবিধা-প্রণোদনা দিচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে সীমিত ও নি¤œ আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হলেও এ বছর উল্লেখযোগ্য কোনো ত্রাণ কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। বেসরকারিভাবে সীমিত কিছু ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

দেশে বর্তমানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এতে মাথাপিছু হিসাব করলে দুই টাকারও কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে এ বরাদ্দকে খুবই অপ্রতুল মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারত শুক্রবার ২৬ হাজার কোটি রুপির (প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা) ত্রাণ তথা রেশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশেও এমন সর্বব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা প্রয়োজন।

গতকাল ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে কর্মহীন মানুষের মানবিক সহায়তায় এ পর্যন্ত ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সরকারের কাছে হতদরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের সঠিক তালিকা না থাকায় দুর্যোগকালে সঠিক মানুষটি সরকারি সহায়তা পায় না। গত বছর ৩৬ লাখ ৭ হাজার ৮৭২ পরিবারের কাছে আড়াই হাজার করে টাকা পৌঁছানোর কথা বলা হলেও দেখা গেছে, শতকোটি টাকার বেশি ফেরত এসেছে। ৪ লাখ ২ হাজার ১৬৮টি পরিবারের কাছে কোনো টাকা পৌঁছায়নি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ বিভাগকে এক চিঠিতে জানিয়েছে। এটি আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার হতদরিদ্রদের জন্য আড়াই হাজার টাকা করে যে নগদ সহায়তা দিয়েছে, তা বণ্টনের সময় প্রান্তিক মানুষ পেলেও অনেক ক্ষেত্রে সুশাসনের ভিত্তিতে হয়নি। কারা সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাবেন, তা জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অনেক সচ্ছল পরিবারও সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার আওতায় আসছেন। তাহলে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র থেকে কী লাভ? মনে রাখতে হবে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ আপাতত অনেক বেশি মনে হলেও প্রকৃতভাবে তা নয়। প্রকৃত হতদরিদ্রদের মধ্যে অর্থ ও মানবিক সহায়তা বিতরিত হলেই জনদুর্ভোগ কমবে। সে লক্ষ্যে বিতরণ কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়েই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।