কবিতা রানী মৃধা: কভিড-১৯-এর মহামারির কারণে পুরো দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে সুরক্ষিত ছিল। যেহেতু বাংলাদেশে কভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়নি; তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা অতীব প্রয়োজনীয়।
দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ধাপে ধাপে খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার বৈশ্বিক অতিমারি বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২২৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। আমাদের দেশে করোনা অতিমারির প্রকোপ বিভিন্ন পর্যায়ে কিছুটা কমতির লক্ষণ দেখা দিলে, কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার চেষ্টা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ব্যাহত করে দেয়। এ পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের সর্বশেষ তথ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউনেসকো, বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র সিডিসি এবং দেশের করোনাবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শ মোতাবেক ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন ধাপে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং যথারীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ক্রমশ কমছে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে ভয়। যদিও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে ক্লাসের কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে; তবুও ভয় থেকেই যায়। কারণ আধো স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না, তা অনিশ্চিত। আর এ অনিশ্চয়তার কারণেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে আসতে দিচ্ছে না; তাই উপস্থিতির হার কমছে।
আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযোজ্যদের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধানে বাধ্যবাধকতা, তাপমাত্রা পরীক্ষা, ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস বা সেকশন সংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিতকরণ, উপসর্গযুক্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশ না নেয়া এবং করোনা স্ক্রিনিং প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের যৌথ অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা। এ ছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যথাযথ দিকনির্দেশনা, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের স্কুলে না পাঠানো, অযথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় ভিড় বা জমায়েত না করা এবং স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগকে সাফল্যে পরিণত করার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রমণ হ্রাসে সহায়ক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষই মূলত সংক্রমণের প্রধান ক্ষেত্র। সংক্রমণ হ্রাসে শ্রেণিকক্ষে করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রেণিকক্ষে মাস্ক পরিধান, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির আদবকেতা, ক্লাস ও ক্লাসের আসবাবপত্র পরিচ্ছন্নতা, আলো-বাতাস চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
একটি ৯ দফা নির্দেশনা প্রণয়নে কভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াকে স্বাগত জানিয়ে ৯ দফার একটি নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিবেচনায় রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ৫ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী ছাড়া সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া ও সাধারণ পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা, বিদ্যালয়ে সব ধরনের জনসমাগমজনিত কর্মসূচি বন্ধ রাখা, পরীক্ষার্থীরা ছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাস সপ্তাহে ১-২ দিন চালু রাখা, সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে ১৪ দিন পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থান, স্কুলে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টিং এবং সব বিধিনিষেধ নিশ্চিতকল্পে মনিটরিং টিম গঠন। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ১৯ দফা দিকনির্দেশনা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা; প্রতিষ্ঠানে ঢোকার সময় সবার তাপমাত্রা পরীক্ষণ, প্রতি স্কুলে আইসোলেশন কক্ষ স্থাপন, শ্রেণিকক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষের সব স্থানে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, কভিড সচেতনতামূলক পোস্টার, ব্যানার স্থাপন এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে নজরদারির জন্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন এবং ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং করে যৌথ উদ্যোগে সব কার্যক্রম সফল করা।
কভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটি ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্তের আলোকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। এসব নির্দেশনার যথাযথ নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এ নির্দেশনা যথাযথ নিশ্চিত করা হলে শিক্ষাঙ্গনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। তার সঙ্গে ক্লাসে শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধি পাবে এবং অভিভাবকরাও ভয়মুক্ত হবে।
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়