Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 8:31 pm

কভিডের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কতটা দরকার

দেশে এরই মধ্যে কভিডের টিকা নিয়েছেন অনেকে। তাতে কি সংক্রমণকারী ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে শরীরে? রক্তে কি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে? অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কোনো দরকার আছে কি না। এখন এমন বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির অংশ হচ্ছে অ্যান্টিবডি। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে এটি। কেবল টিকা নেয়ার পরই নয়, করোনা হওয়ার পরও শরীরে এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি প্রোটিন দিয়ে তৈরি। জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর আগে থেকে রক্তে অ্যান্টিবডি থাকলে তা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যদি অ্যান্টিবডি আগে থেকে শরীরে না থাকে, তাহলে সংক্রমণের পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেজন্য অবশ্য একটা নির্দিষ্ট সময় লাগে।

কিছু অসুখের ক্ষেত্রে শরীরে একবার অ্যান্টিবডি তৈরি হলে সারাজীবন তা সুরক্ষা দেয়। আবার কিছু সংক্রামক রোগে অ্যান্টিবডি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবার একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

আন্তর্জাতিক একটি সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, করোনার ক্ষেত্রে মাত্র ৩৮ শতাংশ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফল ঠিকঠাক তথ্য দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ততটা গুরুত্ব দেয়নি, কারণ অ্যান্টিবডির উপস্থিতির কারণে করোনার সংক্রমণ থেকে কতটা সুরক্ষা পাওয়া যাবে, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে স্থির করা যায় না। এ ছাড়া ভুল ফলাফলের আশঙ্কাও থাকে। ফল্স পজিটিভ এলে এবং এর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানায় শিথিলতা দেখালে উল্টো সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এদিকে অ্যান্টিবডি পজিটিভ আসার পরও যে কেউ করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন এবং উপসর্গহীন থাকতে পারেন। এতে নিজের অজান্তে এই রোগী অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু অ্যান্টিবডি থাকলেই সংক্রমণ মোকাবিলা করা যায় না। সামগ্রিক পুষ্টিমান, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় মিলেই যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আবার টিকা দেয়ার পর বা সংক্রমণের পর অ্যান্টিবডি ছাড়াও কোষভিত্তিক এক ধরনের প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যা অ্যান্টিবডির পরিমাপ দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়।

অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফলই শেষ কথা নয়, বা এটি প্রয়োজনীয় কিছু নয়। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো টিকা নেয়া, মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং যতটা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান

বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ