কভিডের টিকা বনাম স্বাস্থ্যবিধি: মাস্ক

গতকালের পর

টিকা হলো সারারাত জেগে থাকা বাড়ির পাহারাদার বা গ্রামের চৌকিদারের মতো, যিনি শত্রু ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে জাগিয়ে তুলবেন। আর মাস্ক হলো কাঁটাতারের বেড়া, যা শত্রুকে তার ত্রিসীমানায়ই ঢুকতে দেবে না।

বয়স্ক, দুর্বল ও ইমিউনো কম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা টিকা নিলেও ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। ক্যান্সার রোগীর জন্য কভিড অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি যারা নিচ্ছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। যাদের ফুসফুসে ক্যান্সার আছে এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তারা আরও ঝুঁকিপূর্ণ। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, এইচআইভি, মাল্টিপল মায়েলোমাতে সরাসরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষকেই আক্রমণ করে। তাহলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে কে? এ জন্য মাস্ক পরিধান শ্রেয়।

টিকা নেয়া থাকলেও নতুন ভ্যারিয়েন্টে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারে। আবার গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাপ্রাপ্ত রোগীরা নিজেরা আক্রান্ত না হলেও তাদের নাসিকায় বা গলবিলে করোনাভাইরাস থাকলে তার মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। তাহলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের সুরক্ষা কোথা থেকে মিলবে? এর উত্তর হলো, মাস্ক পরিধান করা এবং করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানা। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তা চালাতেই হবে।

করোনাভাইরাসের সব ভ্যারিয়েন্টই মাস্কে আটকা পড়ে। মাস্ক ব্যবহার করা সব ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেই সমান কার্যকর। কিন্তু টিকা সব ধরনের ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সমান কার্যকর নয়। মাস্ক পরিধান তথা স্বাস্থ্যবিধি বায়ুবাহিত সব ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া-ফাংগাল রোগই প্রতিহত করে। কিন্তু টিকা শুধু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেই কার্যকর।

মাস্ক পরলে, কিছু সময় পরপর সাবান-পানিতে হাত ধুলে আর জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চললে করোনা সংক্রমণ ৯০-৯৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সার্জিক্যাল মাস্ক খুব সহজলভ্য, সস্তা অথচ রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। সিঙ্গল লেয়ার সার্জিক্যাল মাস্ক দুটি করে পরলে প্রায় ৯০ শতাংশ সুরক্ষা হয়। তবে কাপড়ের মাস্কের সুবিধা হলো, বাড়ি এসে ভালো করে সাবানে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আবার তিন দিন পর ব্যবহার করা যায়। [শেষ]

ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন

সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগ, এনআইকেডিইউ