Print Date & Time : 20 August 2025 Wednesday 6:19 pm

কভিডে সিএসআর খাতে অতিরিক্ত এক শতাংশ ব্যয়ের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বছর সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো যে টাকা বরাদ্দ রেখেছে, তার সঙ্গে নিট মুনাফার আরও এক শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২১ সালে সিএসআর খাতে কোনো ব্যাংক যদি এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে আর ওই ব্যাংকের ২০২০ সালে নিট মুনাফা যদি ১০০ কোটি টাকা হয়, তাহলে অতিরিক্ত এক কোটি টাকাসহ মোট দুই কোটি টাকা এ বছর সিএসআর খাতে ব্যয় করতে হবে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার আবার বেড়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ায় বিপদগ্রস্ত, কর্মহীন, দরিদ্র, ছিন্নমূল, দুস্থ ও অসহায় জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা জরুরি। এজন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা পরিপালনের উদ্দেশ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২০২১ সালের সিএসআই বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দের মাধ্যমে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো ২০২০ সালের নিরীক্ষিত (হিসাব বিবরণী চূড়ান্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে অনিরীক্ষিত) হিসাব অনুযায়ী যে পরিমাণ নিট মুনাফা অর্জন করেছে, তার এক শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ ২০২১ সালের সিএসআর খাতের বাজেটে এরই মধ্যে বরাদ্দ অর্থের অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘটনোত্তর অনুমোদন নিতে হবে। বরাদ্দ অতিরিক্ত অর্থ জুন ২০২১-এর মধ্যে অনুচ্ছেদ ৪ এ বর্ণিত ক্ষেত্রে সিএসআর হিসেবে ব্যয় করতে হবে। সিএসআর খাতে বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ স্থানান্তর নিশ্চিত করে তা আগামী ১৫ মের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হবে।

অতিরিক্ত বরাদ্দ অর্থ ব্যাংকগুলো ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সিএসআর খাতে বরাদ্দ অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে। বিশেষ সিএসআর বাজেট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তায় ব্যয় করতে হবে। এর মধ্যে  সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর বস্তিবাসী, ছিন্নমূল ও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পারবে। বিভিন্ন জেলার হতদরিদ্র, সাময়িক কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা করোনাভাইরাসজনিত রোগ বিস্তারের কারণে স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা নির্বাহে অসমর্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বিশেষ সিএসআর খাতে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ অর্থ সিটি করপোরেশন এলাকা এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যয় করতে হবে। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তা যাতে কোনো বিশেষ এলাকায় কেন্দ্রীভূত না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সহায়তায় অথবা শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও বা এমএফআইগুলোর মাধ্যমে অথবা উভয় প্রকারে প্রস্তাবিত বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলোর এ বিষয়ে পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকের সহায়তায় আলোচ্য কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুকূলে পরিচালিত হিসাব এবং এনজিও/এমএফআই’র মাধ্যমে পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এনজিও/এমএফআই’র নামে রক্ষিত হিসাবে টাকা জমা/স্থানান্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, উপকারভোগীর সংখ্যা, সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা/ইউনিয়নের নামসহ বিস্তারিত তথ্য ব্যাংক সংরক্ষণ করবে।

বিশেষ সিএসআরের আওতায় কার্যক্রমটি যথাসময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) সমন্বয়ক ও সহায়তাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও/এমএফআইলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবিবি’র সহায়তা নেবে। এবিবি সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। বিশেষ সিএসআর-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ-সংক্রান্ত বাস্তবায়ন প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে মহাব্যবস্থাপক, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর দাখিল করতে হবে।

এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।