মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরে বেড়েই চলেছে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীতে পূর্ণ যশোর জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালের কোথাও রোগী রাখার জায়গা না থাকায় হাসপাতালের পাশে ইজিবাইক ও ভ্যানসহ গাছতলায় রোগীদের অক্সিজেন দেয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই নতুন রোগী আসায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম পোহাচ্ছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে গত মঙ্গলবার বিকালে দেখা যায়, রিনা বেগম নামে এক কভিড রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে গাছতলায় বসে রয়েছেন তার স্বজনরা। রিনার স্বামী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, কভিড উপসর্গ নিয়ে সোমবার রিনাকে এই হাসপাতালের কভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে এখান থেকে পাঠানো হয় কভিড ওয়ার্ডের ইয়েলো জোনে। সেখানে জায়গা না থাকায় তাকে ওয়ার্ডের বাইরে নমুনা সংগ্রহের টেবিলে রাখা হয়। মঙ্গলবার সকালে নমুনা সংগ্রহ শুরু হওয়ায় সেখান থেকে নামিয়ে রাখা হয় হাসপাতালের সামনের গাছতলায়। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সেখানেই তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। বিকালে জানতে পারি, আমার স্ত্রী কভিড পজিটিভ। কখন তাকে রেড জোনে নিয়ে যাবে সেই অপেক্ষায় গাছতলায় অক্সিজেন দিয়ে অপেক্ষা করেছি।
রিনার স্বামী আরও জানান, নার্সদের সঙ্গে কথাই বলা যাচ্ছে না। শুধু অক্সিজেন দিয়েই তারা দায়িত্ব শেষ করেছেন। কোনো ওষুধপত্র নেই। মাঝে একজন ডাক্তার এসে শুধু অক্সিজেন বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন।
রিনা বেগমের মতো কভিড আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জায়গা না থাকায় এমন বিপাকে পড়তে হচ্ছে। রাতভর ওয়ার্ডের বাইরে গাছতলায়, ভ্যান, ইজিবাইক ও চৌকির ওপর চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। রোগীর অত্যধিক চাপে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
জানা গেছে, বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ৪৩ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। শূন্য রয়েছে ১২টি পদ। এজন্য গত ৩ জুন ২০ জন চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়। হাসপাতালে নার্স রয়েছেন ২৩২ জন। তাদের মধ্যে গত এক মাসে ৩৯ জন নার্স কভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫ জন সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরও সংকট রয়েছে।
হাসপাতালের কভিড রোগীদের রেডজোনে ১৪৬ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১৫৫ জন। আর উপসর্গ নিয়ে ইয়েলোজোনের তিনটি ওয়ার্ডে ৩১ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৮৮ জন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, কভিড ও এ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শয্যা বাড়িয়েও জায়গার সংকুলান করা যাচ্ছে না। ফলে জায়গা না পেয়ে বারান্দা কিংবা গাছতলায় থাকার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা ইয়েলো জোনের শয্যা ও জায়গা বাড়িয়েছি। আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান।
ডা. আরিফ আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে কভিড আক্রান্ত হয়ে ছয়জন ও উপসর্গ নিয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। কভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত রেড ও ইয়েলোজোনে মোট ২৪৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, রোগীদের চাপ সামলাতে রেডজোনের শয্যা বাড়িয়ে ১৪৬টি করা হয়েছে। পাশাপাশি ইয়েলোজোনেও একটি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু শয্যা বাড়ানো হলেও চিকিৎসক ও নার্স সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে ৬৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৫৩ জনের কভিড শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ।