Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 3:37 am

কভিড রোগীর খাবারে দেয়া হচ্ছে বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে একজন কভিড-১৯ রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ৩০০ টাকা করে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে বরাদ্দের এক তৃতীয়াংশের কম। এখানে একজন রোগীকে তিন বেলা যে খাবার দেয়া হচ্ছে তার বাজারমূল্য ১০০ টাকার বেশি নয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দেয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে একদিকে যেমন রোগীদের বাড়ির খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, অপরদিকে খাবার সরবরাহে কভিড ইউনিটে দর্শনার্থীর আনাগোনায় সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭৪ জন কভিড রোগী। তাদের সকালের নাস্তায় দেয়া হচ্ছে একটি করে পাঁচ টাকা দামের পাউরুটি, আট টাকার ডিম ও পাঁচ টাকার কলা। দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে দেয়া হচ্ছে ডাল, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ। রাতের খাবারেও ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ অথবা একটি ডিম। বর্তমান বাজারদরে তিন বেলার খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা।  রোগীদের খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ফল দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না।

হাসপাতালের কভিড আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা নেয়া রোগী আনোয়ার হোসেন জানান, ১০ দিন হাসপাতালে থেকেছি। কোনো ফল পাইনি। হাসপাতালের খাবারও আমি খেতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, সকালে নাস্তায় একটা কলা দিয়েছিল, সেটিও খাবার উপযোগী ছিল না। আর তরকারি দেখলে খাবার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যেত।

হাসপাতালে চিকিসাধীন একজন কভিড রোগীর স্বজন বেগম বলেন, রোগীদের দেয়া খাবার খুবই নি¤œমানের। রোগী হাসপাতালের খাবার খেতে পারেন না বলে বাড়ি থেকে খাবার পাঠাতে হয়।

সদর হাসপাতালের রাঁধুনী বলেন, ‘হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহকারী যেভাবে খাবার সরবরাহ করছেন সেভাবে রান্না করে কভিড রোগীদের দেয়া হচ্ছে। অনেক রোগী হাসপাতালের খাবার খেতে আগ্রহ দেখান না, তাই তাদের খাবার দেয়া হয় না।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিপুণ মোহন্ত বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের খাবার, ফলমূল ও খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করছি। কভিড রোগীকে তালিকা অনুযায়ী খাদ্য বিতরণ করার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাকিবুল ইসলাম চয়ন এ বিষয়ে বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী চিকিৎসাধীন কভিড রোগীদের সব ধরনের খাদ্য পাওয়ার কথা। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল ইসলাম চপল বলেন, ঠিকাদার যেভাবে খাদ্য সরবরাহ করছেন সেভাবেই কভিড রোগীকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক সময় ঠিকাদারের খাদ্য সরবরাহে সমস্যা হলে খাবারের মান খারাপ হতে পারে। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় কভিডে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় ১০৮ জনের কভিড শনাক্ত হয়েছে।

গতকাল বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২২৫টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের শরীরে কভিড শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। তাদের মধ্যে দুজন দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রংপুর সদর হাসপাতাল ও ঠাকুরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করে মারা গেছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কভিডে আক্রান্ত হয়ে ৬ জুলাই পাঁচ, ৫ জুলাই এক, ৪ জুলাই সাত, ৩ জুলাই চার, ১ জুলাই দুজন মারা গেছেন। নিহতদের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।

ঠাকুরগাঁওয়ে এ পর্যন্ত চার হাজার ৮৯ জন কভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৬০৬ জন ও মারা গেছেন ১০৪ জন।