Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 6:22 pm

কমেছে ডিম ও মুরগির দাম স্থিতিশীল সবজি-পেঁয়াজ

আবুল কালাম আজাদ : সরবরাহ ভালো থাকায় আলুসহ সবজি ও পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। একই সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি ও ডিমের দাম কমেছে। সব ধরনের মুরগির কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ ছাড়া ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। গত এক বছরেও ডিমের দাম এত নিচে নামেনি। তবে বাজারগুলোয় মাছের বাজার চড়া দেখা গেছে।

ক্রেতারা জানান, এবার সবজির দামের পাশাপাশি স্বস্তি দিচ্ছে ফার্মের মুরগি ও ডিমে। কিছুদিন আগেও ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা মাংসের পরিবর্তে মুরগি ও ডিমের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি। এগুলো থেকে তারা তাদের পুষ্টিচাহিদা মেটাতে পারছেন।

রাজধানীর আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, চিটাগং রোড ও আশেপাশের বাজার ঘুরে গতকাল শুক্রবার এসব তথ্য জানা গেছে।
দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৩০০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে বেগুনের কেজি প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, দেশি পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং কচুরমুখী ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সজনে ডাঁটার কেজি ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি টমেটো ৮০ টাকা, ভারতীয় গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৩৫০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা এবং মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোয় লালশাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটাশাক দুই আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজার গত সপ্তাহের মতোই চড়া দেখা গেছে। এসব বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

চাষের এক কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, দেশি শিং এক হাজার টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়ালমাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোয় আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।

বাজারগুলোয় এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘আজ বাজারে এসে দেখছি সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের যে সবজি ৬০ টাকা ছিল, সেই সবজি ৭০ টাকা হয়েছে। আবার কিছু কিছু সবজি ১০০ ঘরেও বিক্রি হচ্ছে। সবমিলিয়ে বলতে গেলে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে সবজির দাম।’

শনির আখড়া মুরগি ব্যবসায়ী বলেন, ‘কোরবানির পর মাছ মাংসের চাহিদ কমে যায়। তখন মুরগি ও ডিমের দামও কমে যায়। এর পরে গত কয়েক সপ্তাহে দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা ওঠানামা করেছে। তিনি জানান, এই মুহূর্তে বেচাকেনা বাড়লেও লাভ কম।

সবজির দামের বিষয়ে রামপুরার সবজি বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, সরবরাহ কমের কারণে আজ অল্প কিছুটা বেশি দাম। তবে যেসব সবজির দাম বেশি, সেগুলোর মৌসুম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, সে কারণে বাজারের সরবরাহ কম। আর সেই সবজিগুলোরই দাম বেশি, যেই শবজিগুলোর মৌসুম শেষের দিকে বা শেষ হয়েছে।

এদিকে পোলট্রি মুরগি ও ডিমের দাম কম থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা-এমন মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআইএ)। সংগঠনটির সভাপতি বলেন, পোলট্রি শিল্প সরল সমীকরণে চলে না। প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও খামারিরা প্রতিনিয়ত দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে প্রোটিন সরবরাহ নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। তাই জাতীয় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে বাজেটে পোলট্রি শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া আবশ্যক।