শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে ‘মাই সেকেন্ড হোম (সিএম২এইচ)’ প্রকল্প চালু করেছে কম্বোডিয়া সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় দেশটিতে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ১০ বছর মেয়াদী ভিসা ও অন্যান্য সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর: খেমার টাইমস।
কম্বোডিয়ার গণমাধ্যম খেমার টাইমস জানায়, খেমার হোম চ্যারিটি অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় সেকেন্ড হোম প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এটি অনুমোদন করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি অননুমোদিত মধ্যস্থতাকারী কোম্পানির দৌরাত্ম্য কমানো এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
আবেদনকারী ১০ বছর মেয়াদী ভিসাপ্রাপ্তির (মাল্টিপল ভিসা) পাশাপাশি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর সুযোগ পাবেন। পাঁচ বছর পর কম্বোডিয়ার নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পাবেন কম্বোডিয়ার পাসপোর্ট। একই সঙ্গে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। খেমার হোম চ্যারিটি অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় তারা স্থানীয় বিমা সুবিধা পাবেন। ভিআইপি চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সব সুবিধা পাবেন।
সিএম২এইচ-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আবেদনকারীকে অবশ্যই কম্বোডিয়া সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের নাগরিক হতে হবে। একজন আবেদনকারীকে অবশ্যই এক লাখ মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। কোনো ধরনের ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজন নেই। এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতাও বাধ্যতামূলক নয়।
মাত্র ৭ দিনের মধ্যে সিএম২এইচ সদস্য নম্বর দেয়া হবে জানায় কম্বোডিয়া সরকার। ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১৪ দিন বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক অ্যাকাউন্টস,
স্বত্ব ও ব্যবসায়ের লাইসেন্স দেয়া হবে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে।
এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য কম্বোডিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করা, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশটির নাগরিকদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৯৯০ সাল থেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে কম্বোডিয়া। দেশটির উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই সময় থেকে জিডিপি বেড়েছে ৭ শতাংশ। গত ১০ বছরে কম্বোডিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে দেশটিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই ছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে এফডিআই বাড়ে ১১৫ শতাংশ (৭৬০ কোটি ডলার)। এ হিসেবে ২০২০ সালে বিশ্বে এফডিআই র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ছিল কম্বোডিয়া। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে চীনে। এরপরের অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দেশটি বিদেশিদের
উদ্বুদ্ধ করছে।
২০২০ সাল থেকে কভিড-১৯ মহামারির কারণে অন্যান্য দেশের মতো কম্বোডিয়াও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। তবে কম্বোডিয়া সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে নেই। অনেক বিদেশি ব্যাংক ও বিশ্বের বৃহৎ ভোক্তা ব্র্যান্ডগুলো গত দুই বছরে কম্বোডিয়ায় ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা উপভোগ করছে। বিশেষ করে রাজধানী নম পে-তে বিদেশি অনেক আবাসন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলা হয়েছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে তাদের অর্থনীতিতে। তাছাড়া বিশ্বের প্রথম শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসুবিধা দেশটিকে বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দেশটির অনেক স্থানীয় বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক স্কুলগুলো বিশ্বমানের শিক্ষা দিচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে দেশটিতে। দেশটির স্বাস্থ্যসেবা খাতও আন্তর্জাতিক মানের, যা তাদের সরকারের সার্বিক সেবা খাতের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ সরকারি ও ৫ হাজার ৫০০ বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নম পে রয়েল হসপিটাল ও জাপানিজ সানসাইন হসপিটাল।
‘কম্বোডিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প দেশটির সক্ষমতা ও সাফল্য প্রমাণ করছে, ভাবমূর্তি উজ্জল করছে। প্রকল্পের চেয়ারম্যান রিকি লাই
উপযুক্ত বিনিয়োগকারীদের আরও বিস্তারিত জানার জন্য ফেসবুক পেজ (িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ঈধসনড়ফরধগুঝবপড়হফঐড়সব) ভিজিট করার অনুরোধ জানিয়েছেন।